দল জিতলে আমি জার্মান, হারলে বিদেশি: ওজিল

দল জিতলে আমি জার্মান, হারলে বিদেশি: ওজিল

ঢাকা, ২৩ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : 'বর্ণবাদ এবং অসম্মানের' শিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তুর্কী বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিল।

চলতি বছরের মে মাসে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ছবি তুলেই জার্মানিতে তীব্র সমালোচনার শিকার হোন ইংলিশ ফুটবল ক্লাব আর্সেনালের ২৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।

মেসুত ওজিল বলেছেন, একারণে অনেকে তাকে হুমকি ধামকি দিয়েছেন, তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে তাকে অনেকে ইমেইল করেছেন এবং রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের শুরুতেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার জন্যে তাকে দায়ী করেছেন।

‘আমরা যখন জিতি তখন আমি জার্মান, কিন্তু যখন হেরে যাই তখন একজন বিদেশি,’ বলেন ওজিল। তার এই অভিযোগের জবাবে জার্মান ফুটবল প্রধানের কাছ থেকে এখনও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কিন্তু ওজিল বলছেন, সম্প্রতি তার প্রতি যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে তাতে তিনি জার্মান জাতীয় দলের জার্সি পরতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ প্রসঙ্গে এক লম্বা বিবৃতি দিয়েছেন মেসুত ওজিল; যাতে তিনি বলেছেন, সরকারকে কর দেওয়া, ভালো কাজের জন্যে দান করা এবং বিশ্বকাপ জয়ের অংশীদার হওয়ার পরেও তার মনে হচ্ছে যে জার্মানির সমাজ তাকে গ্রহণ করে নিতে পারছে না।

তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে ছবি তোলার পর তাকে যারা সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ডিএফবিও।

ওজিল লেখেন, ‘সাম্প্রতিক এসব ঘটনাবলীর কথা বিবেচনা করে আমাকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এটা খুবই কষ্টের যে জার্মানির হয়ে আমি আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবো না। এরকম বর্ণবিদ্বেষ এবং অসম্মান নিয়ে জার্মানির হয়ে খেলা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।’

‘খুব গর্ব আর আনন্দ নিয়ে আমি জার্মান জার্সি পরতাম। কিন্তু এখন আর সেরকম নয়। আমার নিজেকে এখানে অনাকাঙ্খিত মনে হয়। আমার মনে হয়, ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে আমার অভিষেক হওয়ার পর থেকে আমি যা কিছু অর্জন করেছি সেসব মানুষ ভুলে গেছে,’ লিখেছেন তিনি।

তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে ওজিলের সাক্ষাৎ হয় গত মে মাসে, লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে। তখন তার সঙ্গে ছিলেন আরো এক জার্মান ফুটবলার ইলকে গুনদোগান। তিনিও তুর্কী বংশোদ্ভূত। খেলেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে।

ওজিল বলেছেন, সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে তিনি ও গুনদোগান মিলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে আর্সেনালের একটি জার্সিও এসময় উপহার দিয়েছিলেন তিনি।পরে তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের আগে ছবিটি প্রকাশ করে। নির্বাচনে এরদোয়ান আবারও জয়ী হন।

ছবিটি গণমাধ্যমে আসার পর জার্মান গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি ওজিল এবং গুনদোগানের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জার্মানির অনেক রাজনীতিক।

তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সরকার যেভাবে বিরোধী রাজনীতিকদের দমনপীড়ন করছে তার তীব্র সমালোচনা করে জার্মানি। তাই অনেকে অভিযোগ করেছেন, এই ছবি তুলে কার্যত ওজিল নির্বাচনে এরদোয়ানকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

তবে মেসুত ওজিল বলেছেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ছবি তোলার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। পূর্বপুরুষের দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা না করলে তাকে অসম্মান করা হতো বলে মনে করেন তিনি।

‘এটা রাজনীতি কিংবা নির্বাচনের বিষয় ছিল না। এটা ছিল আমার পরিবার যে দেশ থেকে এসেছে সেই দেশের প্রেসিডেন্টকে সম্মান জানানো,’ বলেন ওজিল।

জার্মানিতে প্রায় ৩০ লাখ তুর্কী বংশোদ্ভূত যা প্রায়ই দেশটির রাজনৈতিক বিতর্কে ইস্যু হয়ে উঠে। দেশটিতে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে জার্মানিতে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ওজিল তার বিবৃতিতে প্রশ্ন তুলেছেন, জার্মান দলে তার মতো আরও অনেকেই আছেন, যাদের সঙ্গে জার্মানি ছাড়াও অন্য আরেকটি দেশের যোগাযোগ আছে, তাদের বেলায় সেরকম আচরণ করা হয়নি কেন?

‘এটা কি এই কারণে যে দেশটি তুরস্ক? এটা কি এই কারণে যে আমি একজন মুসলমান? আমার মনে হয় এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আছে,’ বলেন ওজিল।

এদিকে জার্মানির বিচারমন্ত্রী কাটারিনা বার্লি বলেছেন, মেসুত ওজিলের মতো এতো বড় একজন ফুটবলারের মনে যদি এই ধারণা তৈরি হয় যে তিনি এই দেশে কাঙ্খিত নন তাহলে এটা খুব উদ্বেগজনক।’

জার্মানির ক্রীড়া সাংবাদিক রাফায়েল হনিগস্টেইন বলেছেন, এটা জার্মান ফুটবলের জন্যে একটি দুঃখজনক দিন। জার্মান ফুটবল কর্তৃপক্ষের কাছে ওজিলের যে ধরনের সমর্থন পাওয়ার কথা তা তিনি মোটেও পান নি।

মেসুত ওজিলের জন্ম জার্মানির গেলজেনকিরশেনে। তিনি তুর্কী বংশোদ্ভূত তৃতীয় প্রজন্মের জার্মান নাগরিক। ২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

জার্মানির হয়ে ৯২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ওজিল। জার্মান ফুটবল ভক্তদের ভোটে ২০১১ সালের পর থেকে মোট পাঁচবার তিনি বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০৩০ঘ.)