ঢাকার দুই থানার ওসিসহ ১২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকার দুই থানার ওসিসহ ১২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকার দক্ষিণ খান ও যাত্রাবাড়ীর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ১২ পুলিশ সদস্য এবং আরো ৪ বেসামরিক ব্যক্তিকে আসামি করে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার ৩ ও ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দুইটি দুই নারী দায়ের করেন।

নারী ও শিশু ৫ নম্বর ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলার আসামি ঢাকার দক্ষিণ খান থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেনসহ ১০ পুলিশ সদস্য এবং মাজিয়া আক্তার নামে এক নারী।

ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামসুন্নাহার শুনানি শেষে অভিযোগ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন, যাত্রবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির, আরিফ হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আ. রুপ, নুরুল ইসলাম, কন্সটেবল মনিরুল ইসলাম, জয়েনউদ্দিন, মো. তৌফিক, রুনা আক্তার ও ইয়াসমিন আক্তার।

অন্যদিকে নারী ও শিশু ৩ নম্বর ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলার আসামি যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম কাজলসহ পাঁচজন। মামলার অপর ৪ আসামি হলেন, একই থানার এসআই ওসমান আলী, ৩ বেসামরিক সদস্য মো. সোহেল, মিরাজ আলী ও জিহাদ।

মামলাটিতে বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার শুনানি শেষে অভিযোগের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

দক্ষিণ খান থানার ওসিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদীর সঙ্গে তার সৎ আসামি মার্জিয়া আক্তারের ছেলে ইকবাল হোসেনের (স্বজল) জমি-জমা নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা চলছে। সম্প্রতি আদালত মার্জিয়া আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এটা জানতে পেরেই মার্জিয়া বাদী ও তার পরিবারকে উচ্ছেদের জন্য ফ্ল্যাটে ছুটে যায়। ওসি শামীম হোসেন মামলা সম্পর্কে অবগত থাকার পরও মার্জিয়ার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে বাদীর বাসায় গিয়ে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মার্জিয়ার দেখানো মতে ওসি বাদী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বাদীর পোষাক খুলে বিবস্ত্র করে বুকে, পেটে, যৌনাঙ্গে চাপাচাপি করে লাঞ্চিত করে। এসআই আবদুল কাদির বাদীকে নির্যাতন করে। ওসি সেখানে উপস্থিত এক সাক্ষীর শ্লীলতাহানি করে। বাদী এবং সাক্ষীকে তখনই বের হয়ে যেতে বলেন ওসি। বের না হলে তাদের গণধর্ষণের হুমকি দেয়। এ সময় বাদীর ১১ বছরের কন্যআ চিৎকার করলে ওসি ৩ নম্বর সাক্ষীর গালে স্বজোরে থাপ্পড় মেরে রক্তাক্ত করে। বাদী স্বামী ও ২ নম্বর সাক্ষীর স্বামী মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকাবস্থায় ওসির নির্দেশে অপর সকল পুলিশ সদস্য তাদের মোবাইল কেড়ে নেয় এবং তাদের মারধর করে। পরে পুলিশ তাদের ভ্যানে উঠিয়ে তাদের দিকে বন্দুক তাক করে রাখে। এ সময় সব আসামিরা দুই সাক্ষীকে বিবস্ত্র অবস্থায় টানা হেচড়া করে বাসার নীচতলায় নামিয়ে মেইন গেটে তালা দিয়ে বাদী ও অপরাপর সাক্ষীদের বাসা থেকে উচ্ছেদ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। যাওয়া সময় হুমকি দেয় বেশি বাড়াবাড়ি করলে ওই দুইজনকে ক্রসফায়ার দিবে। পরে মার্জিয়াকে দিয়ে বাদী ও সাক্ষীদের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় উল্টো মামলা দায়ের করেন।

অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থানার ওসিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় অভিযোগ, বাদিনী আসামি সোহেল ও জিদাদের বাসার ভাড়াটিয়া। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বাদিনীর স্বামীর অনুপস্থিতিতে আসামি সোহেল, মিরাজ আলী ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় এবং ব্যর্থ হয়ে মারধর করে এবং বাচ্চাসহ রুমে আটক করে রাখে। পরে তার স্বামী আসলে তাকে অপহরণ করে আটকে রাখেন এবং তার কাছে স্ত্রী ও সন্তানদের ছেড়ে দেয়ার কথা বলে ৫ হাজার টাকা মুক্তিপন চায়।

পরবর্তীতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাদিনী যাত্রাবাড়ী থানায় অভিযোগ করলে আসামি এসআই ওসমান আসামি সোহেল, মিরাজ আলী ও জিহাদের কাছ থেকে বাচ্চাদের উদ্ধার করেন। এরপর পুলিশ আসামিরা মামলা না নিয়ে আসামিদের সঙ্গে আপোষ করতে বলেন এবং মামলা দিতে হলে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। ওই নারীর সাথে তার বাসা মালিকের দ্বন্দ্ব হয়েছে। পরে সেখানে এসআই ওসমানকে পাঠানো হয়েছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওই নারী এমন অভিযোগ নিয়ে কখনো আমার সাথে দেখাও করেননি।’