অধিক শস্য উৎপাদনে বিজ্ঞানীদের নতুন প্রযুক্তি

অধিক শস্য উৎপাদনে বিজ্ঞানীদের নতুন প্রযুক্তি

একটি তামাক গাছে জৈব প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এমন ব্যবস্থা করেছেন যাতে সেটি স্বাভাবিকের তুলনায় ৪০ শতাংশ বড় হতে পারে।

তারা বলছেন, প্রাকৃতিক উপায়ে সালোকসংশ্লেষণের ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে যা ঐ গবেষকরা অতিক্রমের উপায় খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। আর এর ফলে শস্য উৎপাদনের হার অনেক বেড়ে যাবে।

তাদের বিশ্বাস এই পদ্ধতি চাল বা গমের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা যাবে।

এই গবেষণাটি বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সাইন্স’এ প্রকাশিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্ব বুঝেই গবেষকরা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামলাতে এই দ্রুত উৎপাদনের বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন।

যেভাবে কাজ করবে এই পদ্ধতি?

২০০৫ সালের তুলনায় এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এসে কৃষির চাহিদা ৬০% থেকে ১২০% পর্যন্ত বেড়ে যাবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তার বিপরীতে যদি ফসল উৎপাদনের হার বছরে বছরে দুই শতাংশ কমতে থাকে তবে ২০৫০ সাল নাগাদ বড় ঘাটতি দেখা যেতে পারে।

সার, কীটনাশক এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ফলে গত কয়েক দশক ধরে ফলন বৃদ্ধি পেলেও ভবিষ্যতে তার সম্ভাবনা সীমিত হয়ে আসছে।

পরিবর্তে বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উন্নতি ঘটিয়ে শস্যের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো দিকে মনোযোগী হয়েছেন।

উদ্ভিদ সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানি থেকে শর্করা উৎপাদন করে, যা তার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এইসব রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে কিছু বিষাক্ত পদার্থও উৎপন্ন হয় যা ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনাকে সীমিত করে।

উদ্ভিদ এই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে যে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয় সেটিকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলে ফটো রেসপিরেশন নামে এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

কিন্তু এক্ষেত্রে উদ্ভিদ আর মূল্যবান শক্তি ব্যয় করে ফেলে যা কিনা তার ফল উৎপাদনে ব্যবহার হতে পারতো। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সেই সীমাবদ্ধতা কাটানো উপায় নিয়েই কাজ করেছেন।

গবেষণা পত্রটির প্রধান লেখক মার্কিন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ড. পল সাউথ বলেছেন, ‘আমরা গাছের শক্তির ব্যবহারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্যে তিনটি ভিন্ন বায়োকেমিক্যাল পদ্ধতিতে কাজ করেছি।’

"অনুমান করা যায় যে, সয়াবিন, ধান, ফল এবং সবজির ক্ষেত্রে এটি করতে পারলে এসবের উৎপাদন প্রায় ৩৬% বৃদ্ধি করা সম্ভব। আমরা উদ্ভিদের শক্তির ব্যবহারের এই শর্টকাট পদ্ধতি নিয়ে প্রযুক্তিগত প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এবং মাঠে অন্তত ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সফলতা পেয়েছি।"

কেন তামাক গাছ বেছে নেওয়া?

এই গবেষণাটির আরেকটি দিক হল - উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরা অঞ্চলে এই পদ্ধতি কতটা ব্যবহার উপযোগী। গবেষকরা এই পরীক্ষার জন্যে শুরুতে তামাক গাছ বেছে নেন কারণ এই উদ্ভিদটি সহজে সংশোধন করা সম্ভব। আর তাদের গঠন অন্য অনেক খাদ্য শস্যের সাথে মিলে যায়।

গবেষক দলটি তাদের গবেষণা থেকে পাওয়া শিক্ষা এখন সয়াবিন, ধান, আলো এবং টমেটো গাছের ওপর প্রয়োগের আশা করছে।

‘আমরা সত্যি সত্যিই আশা করছি যে, এটি এমন একটি প্রযুক্তি হবে যা কৃষিতে বাইরে থেকে প্রয়োগ করা বিষয় কমাবে এবং কম জমিতে আরো বেশি উৎপাদনে সহায়তা করবে,’ বলছিলেন ড. সাউথ।

এরপরও এই গবেষকরা স্বীকার করছেন যে, জিনগত পরিবর্তন প্রক্রিয়া বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই বিতর্কিত।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য ও ফসল বিকশিত হয় তবে কৃষক ও ভোক্তারা এটিকে গ্রহণ করবে। আর এমনটি একটি দীর্ঘ পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব বলে গবেষকরা মনে করেন।

সাব-সাহারান আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষুদ্র চাষিদের জন্যে রয়্যালটি মুক্তভাবে বিতরণের জন্যে এই পদ্ধতিটি আরো উন্নত করা হচ্ছে।

এমজে