আগাম ক্ষীরায় দারুণ লাভ

আগাম ক্ষীরায় দারুণ লাভ

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পূর্ব খৈয়াছড়া গ্রামের রেলগেট এলাকাটি স্থায়ী বাজার নয়। প্রতিবছর ক্ষীরার মৌসুম এলেই এ স্থানটি সরগরম হয়ে ওঠে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে। সকাল-বিকেল দুই বেলা ক্ষীরার হাট বসে। ভোরের আলো ফুটতেই চারপাশের খেত থেকে টুকরি ভরা সবুজ-সতেজ ক্ষীরা বিক্রি করতে নিয়ে আসেন কৃষকেরা। অস্থায়ী এই বাজারে ভিড় করেন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা।

এবার আগাম চাষ করা ক্ষীরার ভালো দাম বাজারে। এমন দাম পেয়ে দারুণ খুশি এখানকার ক্ষীরাচাষিরা।

গতকাল সোমবার সকাল ছয়টা। তখনো কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশ। পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সারি সারি খেতগুলোতে ক্ষীরা তুলতে ব্যস্ত চাষিরা। সবুজ পাতা আর হলুদ ফুলের দিগন্তজোড়া খেত। তাতে পাতা সরিয়ে ক্ষীরা ছিঁড়ে কোমরে বাঁধা টুকরিতে জমা করছেন কৃষকেরা। খেতের পাশেই বাছাই আর ভাঁজ করে রাখা ক্ষীরা নিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই ছুটছেন রেলগেট বাজারে। চারদিক থেকে চাষিরা আসছেন ক্ষীরার শত শত ঝুড়ি নিয়ে। সেখানে ক্ষীরা নিয়ে রাখতেই তাদের ঘিরে ধরছেন ব্যাপারীরা। দরদামের পর কিনে নেওয়া ক্ষীরা গাড়িতে তুলছেন তারা। বাজারে এদিন পাইকারি দরে প্রতি কেজি ক্ষীরা বিক্রি হতে দেখা গেছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।

স্থানীয় ক্ষীরাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকায় প্রায় এক হাজার কৃষক ক্ষীরা চাষের সঙ্গে যুক্ত। রেলগেটের আশপাশের এক থেকে দুই কিলোমিটার এলাকায় প্রতিটি জমিতেই ক্ষীরা চাষ হয়েছে। পাহাড়ের কোলঘেঁষা উঁচু জমি আর খৈয়াছড়া ঝরনা থেকে নেমে আসা ছড়ার মিষ্টিপানির জোগান ক্ষীরা চাষে এখানকার কৃষকদের বাড়তি সুবিধা দেয়। মৌসুমে খেতের আশপাশে ক্ষীরা বিক্রির হাট গড়ে ওঠায় পরিবহনেও কোনো খরচ হয় না। মৌসুমে প্রতিদিন এই বাজার থেকে ১৫-২০ টন ক্ষীরা কিনে নিয়ে যান স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা।

তাঁরা আরও জানান, আগাম চাষে আশ্বিন মাসের শুরুতেই ক্ষীরার আবাদ শুরু করেন এখানকার চাষিরা। বীজ বপনের ৪৫ দিন পর থেকেই ফলন পাওয়া শুরু হয়। এই সময়ে বাজারে ক্ষীরার জোগান কম থাকায় দাম থাকে বেশ চড়া। আগাম চাষে ভালো দাম পাওয়ায় ক্ষীরা চাষে ঝুঁকছেন এ এলাকার কৃষকেরা।

গতকাল ভোরে নিজের খেতে ক্ষীরা তুলছিলেন কৃষক জহিরুল ইসলাম। ক্ষীরা চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বাজারে ক্ষীরার দাম বেশ ভালো। গত বছর এই সময়ে আগাম ক্ষীরা বিক্রি করেছি কেজি ৩০-৩৫ টাকায়। এবার বাজারে এখন পাইকারি দরে ক্ষীরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। তবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টিতে খেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এই বাজারদর আর এক সপ্তাহ থাকলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। তিনি ২৫ শতক জমিতে আগাম ক্ষীরা করেছেন। খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো। এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার টাকার ক্ষীরা বিক্রি হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এই খেত থেকে আরও ৪০-৫০ হাজার টাকার ক্ষীরা বিক্রি করা যাবে।

এদিন সকাল সাতটায় পূর্ব খৈয়াছড়া রেলগেট ক্ষীরার হাটে কথা হয় চট্টগ্রাম শহরের ইপিজেড এলাকা থেকে ক্ষীরা কিনতে আসা ব্যবসায়ী মো. আবদুল আউয়ালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাটির গুণে এখানকার ক্ষীরা কিছুটা মিষ্টি হয়। তাই বাজারে এই ক্ষীরার চাহিদা বেশি। আমি প্রতিবছরই এখান থেকে ক্ষীরা কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রি করি। এবার পাইকারিতেই ক্ষীরার দাম বেশ চড়া।’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসাবে এবার মিরসরাই উপজেলায় ক্ষীরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের ক্ষীরা চাষ হয়েছে। উপজেলার হিঙ্গুলী, দুর্গাপুর ও খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ক্ষীরার চাষ হয় বেশি। এসব ইউনিয়নের মধ্যে আগাম চাষে খৈয়াছড়া ইউনিয়নই এগিয়ে।

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ রাহা বলেন, এ উপজেলায় যত ক্ষীরা হয়, এর সিংহভাগই উৎপাদিত হয় পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার ক্ষীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। সূত্র : প্রথম আলো।