হাওরপারে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অকাল বন্যায় ভাসতে পারে কৃষকের সোনালি ফসল

হাওরপারে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অকাল বন্যায় ভাসতে পারে কৃষকের সোনালি ফসল

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার হাওরপারে ক্ষেতের সোনালি ফসল ঘরে তোলা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। শুক্রবার রাত থেকে সিলেটে বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১৫ এপ্রিল সিলেট অঞ্চলে আগাম বন্যা হওয়ার বার্তা দেয় আবহাওয়া অধিদফতর। এতে বলা হয় সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো জমি প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১৭-২০ এপ্রিল টানা ৪ দিন হবিগঞ্জে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় ভারতের ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এতে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পাবে। নদীর পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে এবং আগাম বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বোরো জমি তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অকাল বন্যায় ফসল হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

সিলেট আবহওয়া অফিসের কর্মকর্তা অনন্ত বিশ্বাস জানান, শুক্রবার রাত থেকে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শনিবার সকালে সিলেটে ৫৬.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ঢাকা অফিসের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এভাবে আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়ার আগাম সতর্কবার্তায় এখন কৃষকরা দিশেহারা। ক্ষেতে কাটার অপেক্ষায় পাকা ধান, শ্রমিক সংকটের কারণে ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। আকাশ ডাকলেই কেঁপে ওঠে কৃষকের বুক। চোখের সামনে চলে আসে তিন বছর আগে ফসল হারানোর দুঃসহ স্মৃতি। ২০১৭ সালের অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে হাওরাঞ্চলের প্রায় সব ফসলই ডুবে গিয়েছিল অকাল বন্যায়।

সেবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭ জেলায় সুনামগঞ্জে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩১ হেক্টর, হবিগঞ্জে ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৪ হেক্টর, নেত্রকোনায় ৭৯ হাজার ৩৪৫ হেক্টর, কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৩ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৪৭ হাজার ৬০২ হেক্টর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৯ হাজার ৬১৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক নিবাস দেবনাথ জানান, চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগের চার জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর, হবিগঞ্জে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর, সিলেটে ৮০ হাজার ৫০ ও মৌলভীবাজার জেলায় ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে।

ক্ষেতের পাকা ধান কাটতে শ্রমিক সংকট প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ অঞ্চলের ধান কাটার জন্য ৩৬২টি কম্বাইন হারভেস্টর ও ৭১৯টি রিপার সচল রয়েছে। আরও কিছু ধান কাটার যন্ত্রপাতি শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। কয়েক দিন ধরে বৃহত্তর সিলেটের জগন্নাথপুর, ছাতক, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, আজমীরিগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, রাজনগর, বড়লেখা, জুড়ী উপজেলাসহ প্রায় সব উপজেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। পারিবারিক লোকজন ছাড়াও

আত্মীয়-স্বজন দিয়ে এসব এলাকায় চলছে ধান কাটা। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কৃষক হাছন আলী জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে পরিবারের লোকজন দিয়ে ধান কাটা শুরু করেছেন। এভাবে টানা বৃষ্টি হলে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল নামার সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্য দিকে ক্ষেতে থাকা পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাওরপারের কৃষকরা। সব মিলিয়ে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।

এমজে/