ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে সমৃদ্ধি, বাড়ছে আগ্রহ

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে সমৃদ্ধি, বাড়ছে আগ্রহ

মাদারীপুর, ২৮ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় বিলপদ্মা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ জন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। লাভজনক হওয়ায় নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী ও যুবকেরা।

আড়িয়াল খাঁ নদের শিরুয়াইল ইউনিয়ন এলাকার একটি বড় অংশজুড়ে চর পড়েছে। মূল নদীর সংযোগ থাকলেও নেই কোনো স্রোত। সেখানে বৃহৎ জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বড় বড় খাঁচায় করে চলছে মাছের চাষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে এখানে নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হয়। পরে বাঁশকান্দি ইউনিয়নের শেখপুর বিলপদ্মা নদীসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয়েও খাঁচার মাছ চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। বাঁশ ও জাল দিয়ে বড় হাফা (বড় খাঁচা) তৈরি করতে হয়। খাঁচা পানিতে ভাসিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় ড্রামের। এতে তেলাপিয়া, পাঙাশ, কই, শিং, মাগুর, গ্রাস কার্প, শোল, চিংড়ি, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। বাজারে এসব মাছের চাহিদাও ভালো।

তানজিল আহমেদ খান ২০১৫ সালে শিরুয়াইল ইউনিয়নের শেখপুর এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে খাঁচায় মাছ চাষ হয়। ইন্টারনেট ঘেঁটে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। সাফল্য পাওয়ায় এখন অনেকে চাষ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’

তানজিল আহমেদ আরো বলেন, বর্তমানে তার ২৬৫টি খাঁচা রয়েছে। একটি সারিতে ৩০টি খাঁচা রয়েছে। এই ৩০টি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। প্রতিটি খাঁচার গভীরতা ৬ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট ও দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। তিনি মূলত তেলাপিয়ার চাষ করেন। বছরের জুলাইয়ে পোনা কিনে খাঁচার মধ্যে লালন করতে শুরু করেন। পাঁচ মাসের মধ্যেই মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়। প্রতি খাঁচা থেকে ৩০০ কেজি মাছ পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হয়। একেকটি খাঁচায় খরচবাদে লাভ হয় অন্তত ৩০ হাজার টাকা।

খোকন তালুকদার নামে আরেক চাষি বলেন, স্বল্প পুঁজি নিয়েই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। প্রথমে খাঁচা তৈরি করতে এককালীন বেশি টাকা লাগে। এরপর শুধু খরচ হবে মাছের পোনা ও মাছের খাবার বাবদ। এর জন্য নিজস্ব জলাভূমির প্রয়োজন নেই। যে কেউ এই পদ্ধতিতে নদীতে মাছ চাষ করতে পারেন।

শিরুয়াইল গ্রামের মাছচাষি কামরুল দেওয়ান বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে যে তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তা এসব খাঁচায় চাষ করা। এই মাছ আকারে তুলনামূলক বড় ও সুস্বাদু। চাহিদাও বেশি। এখানে আমরা অন্তত ৫০ জন খাঁচায় মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছি। আরো অনেকে মাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা অপূর্ব চৌধুরী বলেন, জলাশয়ে এভাবে মাছ চাষ করা যাবে তা আগে কখনো চিন্তা করিনি। এর মাধ্যমে অনেক বেকার যুবক আত্মনির্ভরশীল হতে পারবেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘জলাশয়ে খাঁচাপদ্ধতিতে মাছের চাষ দিন দিন বাড়ছে। মূলত এভাবে চাষ করলে সঠিক পরিমাণে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ বাজারে বিক্রি করা যায়। এ কারণেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছের চাষ। মৎস্য অফিস খাঁচাপদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০০০ঘ.)