জবিতে ভর্তি পরীক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, ২ ছাত্রলীগ কর্মী আটক

জবিতে ভর্তি পরীক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, ২ ছাত্রলীগ কর্মী আটক

জবি, ৬ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ‘ইউনিট-২’ (মানবিক শাখা)-এর ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে এক পরীক্ষার্থী দুই ছাত্রলীগ কর্মীর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২য় সেমিস্টারের ছাত্র ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী জয়নুল আবেদীন ও একই বিভাগের মোবারক ঠাকুর প্রিন্স। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই শেষে তাদের পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ অভিযুক্তদের নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগের বেশ কিছু কর্মীর তোপের মুখে পড়ে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল টিম এসে ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে আনেন।

লিখিত অভিযোগে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমি পরীক্ষা শেষে বিজ্ঞান অনুষদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। এসময় ওরা দুজন আমাকে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গাকে আঙুল দিয়ে ঈশারা করে নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে আমি খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি।

ওই পরীক্ষার্থী অভিযোগে আরো বলেন, শুধু অশালীন মন্তব্য করেই থেমে জায়নি তারা। বরং আমার উড়না না পরার কারণ জানতে চায় এবং তারা মানিব্যাগ থেকে আমাকে উড়না কেনার টাকা দিতে চায়। এসময় তারা আমার সাথে সর্বোচ্চরকম অশালীন কথাবার্তা বলেন।

এ বিষয়ে ওই নারী শিক্ষার্থীর অভিভাবক তারই বড়বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, এমন আচরণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চরম হতাশাজনক। আজ এ দিনেও যখন নারীরা স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার রাখে না, এটা মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য। আমি চাই আমার বোনের মত কারো সাথে এমন আচরণ করা না হোক। আমাদের চলাচলের নূন্যতম স্বাধীনতাটুকু নিশ্চিত হওয়াই আমাদের দাবি।

অভিযোগের বিষয়ে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্রের বিরুদ্ধে একজন নারী ভর্তিচ্ছুর সাথে অশালীন আচরণের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের কোতয়ালী থানায় সোপর্দ করেছি। এছাড়াও আগামী কর্মদিবসে সর্বোচ্চ মহলে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ছাত্রলীগ কর্মীদের পুলিশের গাড়িটি অবরোধ করার বিষয়ে প্রক্টর বলেন, আমি তাদের কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলবো না। যারা পুলিশের গাড়িটি অবরোধ করার চেষ্টা করেছিল তারা অভিযুক্তদেরই বন্ধু-বান্ধব ছিল। তারা চেয়েছিল যেন ঘটনাটি ক্যাম্পাসেই মীমাংসা করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগ সভাপতি তরিকুর ইসলাম বলেন, যারা অন্যায় করবে তাদেরকে শাস্তি পেতেই হবে। সে যেই হোক না কেন। তবে যদি অভিযোগকারী এবং পুলিশ মনে করে যে, সে ছেলেকে ছেড়ে দিলে আর এমন অন্যায় করবে না তবে তাকে ছেড়েও দিতে পারে।

অভিযুক্তদের পুলিশি হেফাজতে নেয়ার বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, তারা থানা হেফাজতে রয়েছে। তবে যদি কেউ থানায় অভিযোগ না করে তাহলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। কারণ যাদের অভিযোগ তারা আমাদের কাছে না বললে আমরা কি ব্যবস্থা নেবো, কার বিরুদ্ধে নেবো।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/২০২৩ঘ.)