আড়াই লাখ টাকায় রাবিতে ভর্তির প্রতিশ্রুতি ছাত্রলীগ নেতার (অডিও)

আড়াই লাখ টাকায় রাবিতে ভর্তির প্রতিশ্রুতি ছাত্রলীগ নেতার (অডিও)

ঢাকা, ১৪ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়েছে জালিয়াত চক্র। এসব জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে ছাত্রলীগের এক নেতার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। ওই ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক তারেক আহমেদ খান শান্ত। আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি করানোর জন্য ওই ছাত্রলীগ নেতা ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর ফোনালাপের অডিও।

ওই অডিওতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, ‘শান্ত ভাইয়া, আমি এবার সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার রেজাল্টও খারাপ। এবারতো রাজশাহীতে পরীক্ষার নতুন সিস্টেম। আমার মনে হয় আসবে না। রেজাল্ট কম।’ তখন ছাত্রলীগ নেতা শান্ত বলেন, ‘তোমার কত ( রেজাল্ট) আছে?’ তখন ভর্তিচ্ছু বলেন, ‘৯ (জিপিএ) আছে ভাই। আর আমার প্রিপারেশন একটু খারাপ ভাইয়া। এ জন্য আপনার কাছে ফোন দিলাম। আমার ফ্রেন্ড বললো, গত বছর ভর্তি হয়েছিল নাকি আপনার মাধ্যমে। বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে যে করেই হোক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। টাকা-পয়সা যা লাগে দেবে।’

ফোনালাপের এক পর্যায়ে ভর্তি হতে কত টাকা লাগবে তা জানতে চান ওই ভর্তিচ্ছু। তখন শান্ত বলেন, ‘আমাদের সিস্টেম হচ্ছে প্রক্সি। তোমার জায়গায় আরেকজন পরীক্ষা দিয়ে দেবে। আর এই সিস্টেমে অনেকেই করছে, কোনও ঝামেলা হয় না। তিন লাখ টাকা দিতে হবে। সিরিয়ালে মেরিট লিস্টে তোমার নাম আসার পর টাকা দিলেই হবে। তবে এক্সপার্টরা ঢাকা থেকে আসে, তাদের হোটেলে থাকার টাকাটা দিতে হবে।’ এরপর উভয়ের মধ্যে দরকষাকষি চলে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে আড়াই লাখ টাকায় চুক্তি হয়। এরপর ওই ভর্তিচ্ছুকে রাজশাহীতে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেন ছাত্রলীগ নেতা শান্ত।

ফোন রেকর্ডিং এর বিষয়টি স্বীকার করে তারেক আহমেদ খান শান্ত বলেন, ‘আমার কাছে একটা ফোনই এসেছিল। এরপর থেকে ওই ফোন নম্বর বন্ধ। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমনটা করা হয়েছে।’

জানা গেছে, প্রতিবছরই ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে অনেক শিক্ষার্থীকে আটককরা হলেও, তারা পরবর্তীতে পার পেয়ে যান। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রক্সি দিতে গিয়ে বহিষ্কার আটক হন রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন। এ ঘটনায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলেও পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। একই বছর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সজল ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা বিন সজল। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়তির আইনে মামলাও দায়ের হয়। কিন্তু তারা এখন জামিনে আছেন। এর আগে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে রাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমাদের কোনও নেতাকর্মী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত কিনা আমার জানা নেই। কোনও নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও ভর্তি পরীক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। জালিয়াতি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর থাকবে।’সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।

(জাস্ট নিউজ/এমজে/১৬১০ঘ.)