চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় নানা অসঙ্গতির অভিযোগ

ডাকসুতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৬১

ডাকসুতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৬১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ২৫ পদের বিপরীতে লড়বেন ২২৯ জন। এর মধ্যে ভিপি পদে ২১, জিএস পদে ১৪ এবং এজিএস পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

রবিবার সন্ধ্যায় প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘এ তালিকা চূড়ান্ত। প্রার্থিতা নিয়ে আর কোনো আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। শুধু নামের বানান ভুলসংক্রান্ত আপত্তি গ্রহণ করা হবে।’

চূড়ান্ত তালিকা বিশ্লেষণ ও হলে হলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১৮ হলে ৬১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে এজিএস পদে ৩, সম্পাদক পদে ২৭ এবং সদস্যপদে ৩১ জন রয়েছেন।

সদস্যপদের ৩১ জনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৪টি করে পদের বিপরীতে শুধু ৪ জন করেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। অন্য হলগুলোতে ৪টি পদের বিপরীতে ৫-৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ফলে ২৩ সদস্যপদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকা সত্ত্বেও কে বাদ যাবেন, তা নির্ণয়ে প্রার্থীদের ভোটে অংশ নিতে হবে। এই হিসাবে হল সংসদের মোট ২৩৪ পদের মধ্যে নির্বাচন হবে ১৯৬ পদে।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ৯, কমনরুম ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ৯, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ১১, সাহিত্য সম্পাদক ৮, সংস্কৃতি সম্পাদক ১২, ক্রীড়া সম্পাদক ১১, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক ১০, সমাজসেবা সম্পাদক ১৪ এবং ১৩টি সদস্যপদের বিপরীতে ৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বুধবার ২৫টি পদের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ২৩১ জনকে যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আগামী ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল শনিবার বেলা ১টা।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রার্থী তালিকা নিয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছি।

আর কোনো আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। তালিকায় প্রার্থীদের যে ক্রম দেয়া হয়েছে, সেটি ব্যালট নম্বর নয়। পরবর্তী সময়ে সব প্রার্থীর নামের বানান নিশ্চিত হয়ে ব্যালট নম্বর দেয়া হবে। এখন থেকে ভোটের দিনের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে। তবে প্রচারের সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভিন্ন হল থেকে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও হল ছাত্র সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক শাকিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে (সাগর) বলেন, হল সংসদের প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকায় আমার নাম ছিল।

কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় আমার নাম আসেনি। অথচ আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদনও করিনি। বিষয়টি হলের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করলেও তিনি কোনো কারণ জানাননি। তিনি অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র নির্বাচন করার কারণে এর আগে ছাত্রলীগ আমাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি করেছিল। কারণ জানতে হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রার্থীদের প্রচার। চূড়ান্ত তালিকায় নাম আসা অন্তত ৭ জন প্রার্থী যুগান্তরের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ছাত্রলীগ থেকে নানাভাবে চাপ দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা তা করেননি। নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে।

এটি আচরণবিধির ৯(গ) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ডাকসুর আচরণবিধির প্রতি আমরা সব সময় শ্রদ্ধাশীল। কারও প্রচারে ছাত্রলীগের বাধা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

সবাই সবার মতো কাজ করবে। ছাত্রলীগ সাধারণ ভোটারদের সমর্থন নিয়ে নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করবে। ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

হল সংসদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আচরণবিধি সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। যারাই তা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন আসিফ-বেনজিরসহ ৫ জন : ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া ৭ জনের মধ্যে ৫ জনই আপিলে ফিরে পেয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন স্বাধিকার স্বতন্ত্র জোট সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এআরএম আসিফুর রহমান ও বাম জোট সমর্থিত জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির। এ বিষয়ে আসিফ যুগান্তরকে বলেন, আমরা সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের নীলনকশার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। সে জন্য প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল। চূড়ান্ত তালিকায় আমার নাম এসেছে। এর মাধ্যমে সত্যের জয় হয়েছে।

জাসদ ছাত্রলীগের ৭ দফা : এদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল রোববার দুপুর ১২টায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম শীল।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহজাহান আলী সাজু; সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান রাহাত। সংগঠনটির ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব প্রার্থীকে স্ব স্ব হলে সিট প্রদান করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সুযোগ দেয়া, গেস্ট রুমের নামে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা, নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারপ্রধানকে ঘোষণা দিতে হবে যে, ২০২১ সালের মধ্যে শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ভবন ও নতুন হল নির্মাণ করা, প্রত্যেক কেন্দ্র ও বুথের ব্যালট পেপার ও বাক্স ভোট গ্রহণের পূর্বে প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট এবং সাংবাদিকদের দেখাতে হবে।

ভোট গ্রহণ শেষে কোন কেন্দ্রে কত ভোট পড়েছে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা, ভোট গ্রহণের সময়সীমা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত করা এবং নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ও গণনার সময় সাংবাদিকদের অবাধ বিচরণের সুযোগ দিতে হবে।

এমআই