ববি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি

আন্দোলনের ৯ম দিনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ

আন্দোলনের ৯ম দিনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের ৯ম দিনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অনুরোধে আধা ঘণ্টার পরে অবরোধ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাস ফিরে যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে আগামী শনিবার প্রশাসনের মধ্যস্থতায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এক যৌথ সভার প্রস্তাব দেন পুলিশ কমিশনার।

উল্লেখিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি বা কোনো সহিংসতায় না জড়ায় সেই অনুরোধ করেন পুলিশ কমিশনার। শনিবারের আলোচনায় সম্মত হওয়ার পাশাপাশি অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় ক্ষতিসহ সেশন জটের আশংকা সৃষ্টি হলেও উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা। তাই দ্রুত ক্লাশে ফিরতে উপাচার্যকে পদত্যাগের আহ্বান জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শনিবারের সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হওয়ার ব্যাপারে আশার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুব্রত কুমার দাস।

প্রসঙ্গত, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাওয়াত না দেওয়া এবং খাবার প্যাকেট না দেওয়াকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানস্থলে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীদের একাংশ। এতে বিরক্ত হয়ে ওই দিন বিকালে চা চক্র এবং স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বিঘ্নসৃষ্টিকারীদের ‘রাজাকারের বাঁচ্চা’ বলে কটাক্ষ করেন উপাচার্য।

এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের একাংশ পর দিন ২৭ মার্চ থেকে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। ওইদিন রাতে উপাচার্য আন্দোলন প্রশমিত করতে তার একক ক্ষমতা বলে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ এবং বিকেল ৫টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের আদেশ উপেক্ষা করে হলে অবস্থান করে ১০ দফা দাবি বাদ দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। গত কয়েক দিনে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

এদিকে গত বুধবার তারা রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে। এতেও সরকার কর্ণপাত না করায় বৃহস্পতিবার নবম দিন সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে জড়ো হন তারা। এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ১১টায় তারা ক্যাম্পাস ছেড়ে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বিক্ষোভ-মিছিল এবং মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কে জরুরি ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

খবর পেয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোশারফ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দেন। তার অনুরোধে প্রায় ৩০ মিনিট পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। এরপর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা গনিত বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত জানান, পুলিশ কমিশনারের আলোচনার প্রস্তাব তারা সাদরে গ্রহণ করেছেন। আলোচনা এবং উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন একই সাথে চলবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোশারফ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার বিভাগীয় কমিশনারের মধ্যস্থতায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে বলে স্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস। এর ফলে সেশন জট তৈরিসহ শিক্ষা জীবন শেষে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করেন তিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস।

এমআই