ফের উত্তাল হংকং

ফের উত্তাল হংকং

প্রস্তাবিত আসামী প্রত্যাবাসন বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ফের উত্তাল বিক্ষোভ হয়েছে হংকং। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনেও ঢুকে পড়ে ও ভাঙচুর করে। তবে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়েছে। বৃটেন থেকে হংকং-এর স্বার্বভৌমত্ব চীনের কাছে হস্তান্তরের বর্ষপূর্তিতে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিক্ষোভ থেকেই প্রতিবাদকারীদের একটি অংশ দেশের আইনসভা ভবন কয়েকঘন্টা ধরে দখল করে রাখে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় মধ্যরাতের পর শ’ শ’ পুলিশ সদস্য ভবন ঘিরে ফেলে। তার আগে অবশ্য প্রতিবাদকারীদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার আহবান জানায় পুলিশ। অন্যথায় বলপ্রয়োগের কথাও বলা হয়।

বিতর্কিত এক আসামী প্রত্যাবাসন বিলের বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিবাদ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে এই শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রথম বিক্ষোভে ১০ থেকে ২০ লাখ মানুষ অংশ নেয়, যা হংকং-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের ঘটনা। ওই প্রস্তাবিত আইনের সমালোচকরা বলছেন, এই আইন পাস হলে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের মেইনল্যান্ড চীনে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

পার্লামেন্ট ভবন দখলে অবশ্য নেতৃত্ব দেন কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী। তারা ভবনের গ্লাসের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে। পরে পুলিশ সন্ধ্যার দিকে ভবন খালি করতে গেলে আরও কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। পার্লামেন্টের ভেতরে প্রতিবাদকারীরা হংকং-এর জাতীয় সঙ্গীত গায়। এমনকি পুরোনো বৃটিশ পতাকাও উত্তোলন করে। প্রসঙ্গত, চীনের কাছে হস্তান্তরের আগে হংকং ছিল বৃটেনের একটি উপনিবেশ। আইনসভার ভেতর প্রতিবাদকারীরা দেওয়ালে বিভিন্ন বার্তা লিখে এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

তবে দাঙ্গা পুলিশ ভবনের প্রবেশ মুখের প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে লাঠিচার্জ করলে হেলমেট পরিহিত বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে। পার্লামেন্টের ভেতরে কিছু প্রতিবাদকারী সরে যেতে রাজি হননি। অগত্যা, সঙ্গীরাই তাদেরকে জোর করে বের করে নিয়ে যান।

প্রতিবাদকারীদের পক্ষের দুই আইনসভা সদস্য টেড হুই ও রয় ক্যোং পুলিশের সামনে দাঁড়ান। তারা পুলিশকে বলেন, প্রতিবাদকারীদের বের হয়ে যেতে সময় দিতে। এক ঘন্টার মধ্যে গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশ ছাড়া পার্লামেন্ট ভবন ও আশেপাশের সড়ক খালি করে ফেলা হয়। এরপর ভবনের ভেতর তল্লাশি চালায় পুলিশ। কাউকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

পার্লামেন্টের ভেতর পুলিশ প্রবেশ করলে অনেক বিক্ষোভকারী তাদের অনড় সহকর্মীদের বের করে নিয়ে যান। প্রতিবাদকারীদের পক্ষের একজন আইনপ্রণেতা বলেন, তরুণ প্রতিবাদকারীরা প্রথমে বলেছিলেন, তারা সারারাত থাকবেন। তিনি বলেন, ‘তারা বলছিল, প্রয়োজনে পুলিশকে তারা পেটাবে। এ কথা শুনে আমার খুব ভয় হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই একজন সাংবাদিক ছিলাম। ৩০ বছর আগে আমি (চীনের) তিয়ানানমেন রক্তগঙ্গার খবর সংগ্রহ করেছিলাম। তখনও শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীরা ঠিক এই কথাই বলছিল।’

ওই আইনসভা সদস্যের আরেক সহকর্মী আইনপ্রণেতা ফার্নান্দো প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে ভেতরে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি খুশি যে পুলিশের মুখোমুখি হওয়ার আগে সকলে নিরাপদে বের হতে পেরেছে। তিনি বলেন, ‘তারা যদি প্রতিরোধ গড়ে তুলতো, হয়তো সেখানে রক্ত পড়তো। আমার মনে হয়, তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগে দ্বিধা করতো না পুলিশ।’

যারা ফিরে এসেছে তাদের প্রশংসা করেন তিনি। যারা আসতে রাজি হয়নি, তাদের অনেককে তিনি নিজেই জোর করে বের করে এনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই ফিরে এসেছে। যারা আসতে চায়নি, তাদেরকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছি। আমি খুশি যে সকলে নিরাপদ আছে।’

বৃটেন থেকে চীনের কাছে হংকং হস্তান্তরের ২২তম বার্ষিকীতে সোমবার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়। হংকং চীনের অংশ হলেও, এখানে ‘এক দেশ, দুই নীতি’ প্রয়োগ করে চীন। এই নীতির অংশ হিসেবে হংকং-এ কিছুটা স্বায়ত্বশাসন রয়েছে। এছাড়া এখানকার বাসিন্দারা এমন কিছু অধিকার ভোগ করেন যা চীনের মূল ভূখণ্ডের মানুষজন ভোগ করেন না। প্রতি বছর এই দিবস উপলক্ষে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ হয়ে থাকে। এ বছর অবশ্য বার্ষিক বিক্ষোভের আগ থেকেই প্রস্তাবিত ওই আইন নিয়ে উত্তাল ছিল হংকং। তীব্র বিক্ষোভের মুখে সরকার ক্ষমা প্রার্থনা করে ও প্রস্তাবিত আইন স্থগিত করে। তবে প্রতিবাদকারীরা বলছেন যে, এই বিল পুরোপুরি প্রত্যাহার করা না হলে তারা সরবেন না। এবার আবার ছোট আকারে হলেও বেইজিংপন্থী বিক্ষোভ দেখা গেছে। রোববার হাজার হাজার বেইজিংপন্থী বাসিন্দা পুলিশের পক্ষে সমবেত হন।

এমজে/