মাদরাসার সভাপতিকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও রক্ষা পেলেন না শিক্ষিকা!

মাদরাসার সভাপতিকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও রক্ষা পেলেন না শিক্ষিকা!

চাকরি টিকিয়ে রাখতে অবশেষে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হলো এক মাদরাসা শিক্ষিকাকে। এরপর দ্বিতীয় দফায় আবারো ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবির পর তা দিতে রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষিকাকে এখন আর মাদরাসায় আসতে দিচ্ছেন না মাদরাসার সভাপতি ও তার সহযোগীরা।

এমন ঘটনাই ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া দাখিল মাদরাসায়। ঘুষ নেয়ার অভিযোগে মাদরাসাটির সভাপতি মো. আলম শেখসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ১ লাখ টাকা চাঁদা (ঘুষ) নেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী মৌলভী পদের শিক্ষিকা তানজিলা খাতুন।

এ ঘটনার পর ওই ভুক্তভোগী শিক্ষিকা গাজীপুরের বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং ২১৭/২০১৯), যা বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।

মামলার প্রধান আসামি মো. আলম শেখ শ্রীপুর উপজেলার চিনাশুখানিয়া গ্রামের মো. ইসমাইল শেখের ছেলে ও রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। চাঁদা (ঘুষ) দিতে বাধ্য করার এই মামলায় অপর ৩ আসামি হলেন- কাপাসিয়া থানার চাঁদপুর ইউনিয়নের নলগাঁও গ্রামের মৃত আকমত আলীর ছেলে মো. মুছা কাজী ও শ্রীপুর উপজেলার চিনাশুখানিয়া গ্রামের হাজী মো. আহসান উদ্দিন দেওয়ানের ছেলে মো. আমান উল্লাহ দেওয়ান এবং একই গ্রামের আফতাব হোসেনের স্ত্রী ওই মাদরাসার শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে চিনাশুখানিয়া দাখিল মাদরসার অফিস কক্ষে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আলম শেখ ও মামলার অন্য ৩ আসামি তাকে চাঁদা (ঘুষ) দিতে বাধ্য করেন। অন্যথায় নানা ভাবে হয়রানি ও হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন বলে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। এই ঘটনায় মামলার স্বাক্ষী হিসেবে সদ্য অবসরে যাওয়া ওই মাদরাসার সুপার রুহুল আমিন ভূঞাসহ ওই গ্রামেরই ৭ জন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষিকা তানজিলা খাতুন মামলার বিবরণে আরো অভিযোগ করেন, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তাকে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করেন মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মামলার অন্য আসামিরা।

অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য বাধ্য হয়েই ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে তাদেরকে ১ লাখ টাকা চাঁদা (ঘুষ) দিতে বাধ্য হন ওই শিক্ষিকা।

এখানেই শেষ নয়, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মাদরাসার অফিস কক্ষে একই কায়দায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকা তানজিলা খাতুনের কাছে আবারো ২ লাখ টাকা চাঁদা (ঘুষ) দাবি করেন। কিন্তু তিনি চাঁদা (ঘুষ) দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে মাদরাসার ক্লাস নিতে দেয়া হয়নি। একইসঙ্গে শারিরীক নির্যাতন করে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের দেড় ভরি স্বর্ণের চেইন ও নগদ ৭ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয় বলেও উল্লেখ করেন মামলার বিবরণীতে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অন্য শিক্ষকরা জানিয়েছেন, মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আলম শেখ ও মামলার অন্য আসামিদের নানা হুমকি ধমকির মুখে এখন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা তানজিলা খাতুন মাদরাসায় ক্লাস করাতে পারছেন না। ১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও তিনি মাদরাসায় আসতে পারছেন না নানা বাধার মুখে।

এবিষয়ে জানতে মামলার প্রধান আসামি ও মাদরাসার সভাপতি আলম শেখ’র সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাস্ট নিউজ বিডি ডটকম’কে বলেন, ‌‌‌‌‘আপনি সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছেন ভালো কথা। এবার আমার পরিচয় জানেন। আমি রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি।’

ছাত্রলীগ করলে ঘুষ নেয়া বৈধ কিনা? জানতে চাইলে আলম শেখ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। মামলার রায় যা হয় আমি মেনে নেব।’

একজন শিক্ষককে স্কুলে আসতে না দেয়ার ক্ষমতা তাকে কে দিয়েছে এবং এই ক্ষমতা কোন আইনের কত নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা তানজিলা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাস্ট নিউজ বিডি ডটকম’কে বলেন, ‘আমার কাছে থেকে জোরপূর্বক ১ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। আরো ২ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেছে। কিন্তু আমি না দেয়ার কারণে আমাকে মাদ্রাসায় যেতে দেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে একটি মামালা হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার চাচ্ছি।’

এমআই