ঢাবির আইন বিভাগে বেআইনি কারবার

ঢাবির আইন বিভাগে বেআইনি কারবার

নিয়ম অনুযায়ী আট বছরের মধ্যে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার কথা থাকলেও সাত বছরেও অনার্সের গণ্ডি পার হতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক বিশেষ সুবিধা নিয়েও সাত বছরেও আটকে ছিলেন তৃতীয় বর্ষেই। তবে তৃতীয় বর্ষের প্রকাশিত ফলাফলেও একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন সাদ্দাম। তা সত্ত্বেও নজিরবিহীন পদোন্নতি পেয়ে চতুর্থ বর্ষের প্রথম পর্বের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তিনি। যা বিভাগ তথা বিশ^বিদ্যালয়ের নজিরবিহীন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত ক্লাস উপস্থিতি না থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এ পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। অথচ ক্লাস উপস্থিতি শর্তের কারণে পরীক্ষা দিতে না পারারও অসংখ্য নজির আছে বিভাগটিতে। ফলে বিভাগের পক্ষপাতদুষ্ট এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, গত ২৭ মে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়, ১২৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ১২১ জন পরীক্ষায় পাস করেন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অনুত্তীর্ণ তিনজনের একজন হলেন সাদ্দাম হোসেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ২০১১-১২ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষ উত্তীর্ণ হতে তিনি তিন বছর সময় নেন। অর্থাৎ ২০১১, ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য থাকেন। চতুর্থবারের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে সাদ্দাম হোসেন প্রথম বর্ষ উত্তীর্ণ হন। ২০১৬ সালের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি পাস করতে পারেননি। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৮ সালে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা যেটা গত জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে শুরু হয়েছিল সেই পরীক্ষায় তিনি একাধিক কোর্সে অকৃতকার্য হয়েছেন। সর্বোপরি এই ছাত্রনেতা গত সাত বছরে তৃতীয় বর্ষ পার হতে পারেনি। তা সত্ত্বেও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
সাধারণত কোনো শিক্ষার্থী সেমিস্টার বা বার্ষিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে ফলাফলের খাতায় নাম আসে না। তবে যারা একটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হন তাদের নাম ফলাফলের তালিকায় থাকে। তারা পরবর্তী সেমিস্টার বা বর্ষে ভর্তি হতে এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। তবে ফলাফলের তালিকায় যাদের নাম আসে না তাদেরকে আগের সেমিস্টার বা বর্ষে পুনরায় পড়াশুনা করে উত্তীর্ণ হতে হয়।

বিভাগ সূত্রে নিশ্চিত করে যে, পদোন্নতি পাওয়ার পর চতুর্থ বর্ষের প্রথম পর্বের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন সাদ্দাম। এর মধ্যে দু’টি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। যদিও সাদ্দামকে পরীক্ষায় সুযোগ দানের ক্ষেত্রেও বৈষম্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শুধু এক সাদ্দামের জন্যই বিভাগের নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, এই পরীক্ষায় অংশ নেয়া জন্য তার ক্লাসে উপস্থিতি ছিল ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যদিও কারো ২০ শতাংশ উপস্থিতি থাকার শর্তে এর আগে কারও পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। চতুর্থ বর্ষের পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল (৪০৪) কোর্সেও ১৮টি ক্লাসের মধ্যে তার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ১২টি। যদিও চতুর্থ বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তিনি কোনো কোর্সেই নিয়মিত ক্লাস করেন না। তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্যই তার উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।

যদিও এর আগে ৬০ শতাংশ উপস্থিতির না থাকায় পরীক্ষা দিতে পারেননি এমন ২০১২-১৩ সেশনের এক শিক্ষার্থীর সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, আমার ২০১৮ সালে মাস্টার্স দেয়ার কথা থাকলেও উপস্থিতির জন্য দিতে পারিনি। পরে আমাকে ২০১৯ সালে মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিভাগটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাইমা হককে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন আপনার সাথে কথা বলব না। অফিসের সময় ফোন করবেন। আইন অনুদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: রহমত উল্লাহকে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, ডিনস কমিটি তাকে (সাদ্দাম) সাপ্লিমেন্টারি সুযোগ দিয়েছে। এখানে ভিসির হাত নেই। ভিসির অনুমতি ছাড়া ডিনস কমিটি ব্যতিক্রমী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না জানতে চাইলে ভিসি বলেন, সাধারণ নিয়মের ব্যত্যয় এটা। আর এ ক্ষেত্রে ডিনরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এমজে/