লালকার্ড খেয়েও মাঠ ছাড়ছেন না জাবি ভিসি

লালকার্ড খেয়েও মাঠ ছাড়ছেন না জাবি ভিসি

ঈদুল আযহার আগে ছাত্রলীগকে দুইকোটি টাকা প্রদানকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী আন্দোলন করছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। টানা বিক্ষোভ-সমাবেশ, প্রশাসনিক ভবন অবরোধ, কালোপতাকা প্রদর্শন, পরীক্ষাকেন্দ্রে ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ভিসির উদ্দেশ্য তিরস্কারপত্র পাঠ এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার ভিসিকে লালকার্ড দেখিয়ে বুধবার থেকে জাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

এর আগে ১ অক্টোবরের মধ্যে ভিসিকে পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু তিনি এখনও পদত্যাগ করেননি। যার ফলে আগামী দুইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক এসেছে।

পদত্যাগের আল্টিমেটামের শেষদিন (১ অক্টোবর) শহীদ মিনার চত্বর ভিসিকে লালকার্ড দেখিয়ে আন্দোলকারীরা বলেন, ‘এর আগে বিভিন্ন শিক্ষকের নামে যৌন নিপীড়নের একাধিক অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থাই নেয়নি ভিসি। পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তো আছেই। যেহেতু আজকের মধ্যে ভিসি পদত্যাগ করেননি। তাই বুধ এবং বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করা হবে, ঘেরাও করা হবে প্রশাসনিক ভবন। এসময় জাবিতে কোন ক্লাস করতে দেয়া হবেনা, ক্যাম্পাসের গাড়িও অবরোধের আওতায় থাকবে।’

কর্মসূচিতে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘দুর্নীতির বিষয়টি ক্যাম্পাসের সকল স্টেকহোল্ডারসহ সারা বাংলাদেশে জানাজানি হয়ে গেছে। তাই ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের উচিত বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজের কল্যাণের কথা চিন্তা করে পদত্যাগ থেকে সরে দাড়াঁনো। আমরা মনে করি, ভিসি সসম্মানের পদত্যাগ করলে তিনি আরো সম্মানিত হবেন।’

অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া বলেন, ‘আল্টিমেটাম শেষ হয়ে গেছে, তবুও তিনি সম্মানের সহিত পদত্যাগ করেন নাই। বিগত ছয় বছরে দুর্নীতি আর অনিয়মের মধ্যে দিয়ে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়কে শেষ করে দিয়েছেন। আপনার দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে আজকে আমরা লালকার্ড দেখাচ্ছি। পাশাপাশি সরকার কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য যে টাকা এসেছে সে টাকা নিয়ে আপনি যা শুরু করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মান বিক্রি করেছেন। আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। মনে রাখবেন, আপনি পদত্যাগ না করলে যেকোনভাবে আপনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আদীব আরিফ বলেন, ‘আপনি দুর্নীতির দায়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথাও কর্ণপাত করলেন না। এখন আমাদের আল্টিমেটামও কর্ণপাত করেনননি। আপনি শক্তিপ্রদর্শনের মাধ্যমে টিকে থাকতে চান, তবে আমরা আপনাকে আর পরোয়া করছি না। যেকোনভাবে আপনাকে পদত্যাগ করতেই হবে।’

এদিকে আন্দোলনকারীরা সর্বাত্মক ধর্মঘটের হুমকি এবং লাল কার্ড খেয়েও মাঠ ছাড়ছেননা ভিসি ও ভিসিপন্থী শিক্ষকরা। মঙ্গলবার আন্দোলকারীদের লালকার্ড কর্মসূচির পরপরই পাল্টাকর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে ভিসিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’।

বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারী ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবিতে বুধবার মানববন্ধন এবং বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচি করার ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের একাংশের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রশাসন দুটি দাবি মেনে নিয়ে সমস্যার সমাধনের পথ সহজ করেছে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী শিক্ষক গোষ্ঠী নিজেদের এজেন্ডা (ভিসিকে গদিচ্যুত করা) বাস্তবায়নে একটি ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রমূলক ফোনালাপের সংলাপ তৈরি করে। যাতে ভিসি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা যায়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে তারা পুনরায় জাহাঙ্গীরনগরকে অস্থিতিশীল করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চাই।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির এবং বর্তমান ভিসি অধ্যাপক আমির হোসেন এ ঘটনার পর গর্ত থেকে বেরিয়ে আসেন। যারা নিজেরাই দুর্নীতিবাজদের শিরোমণি হিসেবে পরিচিত।’

এদিকে আগামী দুইদিন বুধবার ও বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের ভিসি পতনের ধর্মঘট এবং একইদিনগুলোতে ভিসিপন্থীদের পাল্টা কর্মসূচি ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী সময়ে আবারো উত্তাল হয়েছে জাবি ক্যাম্পাস গোপালগঞ্জের পর এবার দেশবাসীর নজর জাবি ক্যাম্পাসের দিকে।’

এমআই