ছাত্রলীগ নেতাদের পিটুনি, ঢাবি ছাত্র এহসানের চোখ নিয়ে শঙ্কা

ছাত্রলীগ নেতাদের পিটুনি, ঢাবি ছাত্র এহসানের চোখ নিয়ে শঙ্কা

ঢাবি, ৯ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাম মুসলিম (এস এম) হলে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের পিটুনির ঘটনায় আহত এহসান রফিকের চোখের আঘাতের কোনো উন্নতি হচ্ছে না।

এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুয়োগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে আঘাত পাওয়ার পর থেকে বাম চোখ খুলতে পারছেন না এহসান। প্রচণ্ড আঘাতের ফলে স্বাভাবিক নড়াচড়ার ক্ষমতা হারানো চোখের লেন্সগুলো এখনও ফিরছে না আগের অবস্থায়।

পিটুনির পর রাতে এবং পরের দিন সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইবার চিকিৎসা হয়েছে এহসানের। পরে আরও কয়েকটি চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো লাভ হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার আজ শুক্রবার সকাল থেকে নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এহসান রফিকের, থেমে থেমে হচ্ছে বমি। এহসানের বাবা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এহসানের কাছ থেকে একটি ক্যালকুলেটর ধার নিয়েছিলেন বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুক। মঙ্গলবার গভীর রাতে ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়া নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়।

পরে ওমর ফারুক তার সাঙ্গপাঙ্গরা এহসানকে আটকে নিয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে শিবির কর্মী কি না তা যাচাইয়ের চেষ্টা চলে।

সেখানে শিবির কর্মী হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ে এক দফা পেটানো হয়। কিন্তু স্বীকার না করার পর মোবাইল ফোন, ফেসবুক আইডি পরীক্ষা করে শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরে এহসানকে হল থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দেন তাহসান রাসেল। হলের গেটে আসার পর রুহুল আমিন, ওমর ফারুক ও মেহেদী হাসান হিমেল তাকে রড দিয়ে বেদম পেটান বলে অভিযোগ করেছেন এহসান। এ সময় তিনি চোখে মারাত্মক আঘাত পান। আর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর একজন নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেলে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের কথা বলে চিকিৎসা করার পর আবার এহসানকে এসএম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান রাসেলের কক্ষে নেয়া হয়। এরপর সকালে চোখের অবস্থা আবার খারাপ হলে আরেক দফা ঢাকা মেডিকেল নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। পরে আবার হলে ফিরিয়ে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতার কক্ষে রাখা হয়। গভীর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো খাবার দেয়া হয়নি তাকে। এরপর এহসান কৌশলে পালিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে গিয়ে অভিযোগ করেন।

এহসানকে মারধরের ঘটনায় বুধবার এসএম হল ছাত্রলীগের তিন নেতাকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এদের মধ্যে রুহুল আমিন ও ওমর ফারুক হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর মেহেদী হাসান হিমেল করছিলেন উপ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদকের।

এরই মধ্যে এহসানকে নিয়ে ব্লেইম গেইম মেতে ওঠেছে হল ছাত্রলীগের মধ্যে দুটি পক্ষ। একপক্ষ তাকে শিবিরকর্মীর অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করছে, আরেক পক্ষ ঘায়েল করার চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষকে।

এস এম হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদক পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা বলছেন, এহসান শিবির করেন, এর প্রমাণ তাদের কাছে আছে। যদিও এর আগে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ নিজেও সাংবাদিকদের মুঠোফোনে বলেছিলেন, ‘ছেলেটি ভাল ছেলে, সে শিবির করে না’।

এহসানের বাবা বলেন, ‘ছেলেটার চোখ নিয়ে অনেক বিপদে আছি। একটার পর একটা ডাক্তার পরিবর্তন করছি, তারপরও কেন জানি কোনো উন্নতি হচ্ছে না। জানি না, আদৌ আমি ছেলেটার চিকিৎসা দেশে করাতে পারব না কি বাইরে নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকালেই এহসানকে নিয়ে ভিশন আই চক্ষু হাসপাতালের মনিরুল ইসলামের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কিছুই বলেননি ডাক্তার।’

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১৯৩০ঘ.)