রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

জোহা হলে ছাত্রলীগের টর্চারসেল কক্ষ ‘২৫৪’

জোহা হলে ছাত্রলীগের টর্চারসেল কক্ষ ‘২৫৪’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে নিজেদের টর্চার সেলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন সহপাঠীরা। এ সময় তারা তিন দফা দাবি জানান। প্রশাসনের আশ্বাসে প্রায় চার ঘণ্টা পর বেলা ৩টার দিকে তারা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেন।

মারধরে আহত ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সোহরাব মিয়া শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র। মাথা ও হাতে গুরুতর জখম নিয়ে তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে মারধর করা ছাত্রলীগকর্মী আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবির নাহিদ জোহা হল ছাত্রলীগের দায়িত্বে রয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী বলে ছাত্ররা জানিয়েছেন।

হল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আসিফের নেতৃত্বে কয়েক ছাত্রলীগকর্মী ল্যাপটপ চুরির অভিযোগে সোহরাবকে হলের তৃতীয় ব্লকের ২৫৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবির নাহিদ একপর্যায়ে সোহরাবকে রড দিয়ে পিটাতে থাকেন। হাতে ও মাথায় জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে সোহরাবের বন্ধুরা গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র হয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

সোহরাবের বন্ধু তনয় বলেন, ‘সোহরাবের বাম হাতের কনুইয়ের ওপর ও নিচে দুই জায়গায় ভেঙে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথার তিন জায়গায় ১৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছে তার পায়েও। এক্সরে করা হচ্ছে, রিপোর্ট পেলে জানা যাবে পা ভেঙেছে কিনা। মাথায়ও সিটিস্ক্যান করাতে হবে।’

তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আসিফ লাক বলেন, ‘দুদিন আগে ২৫৮ কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ চুরি হয়। যখন এ ঘটনা ঘটে তখন ওই ব্লকে সোহান ও আদিত্য নামে দুই বহিরাগত এসেছিল সোহরাবের কাছে। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে সোহরাবের সঙ্গে কথা বলি। শুক্রবারও বহিরাগত সোহান এসেছিল। সোহরাব তাকে নিয়ে হলের পানি ট্যাঙ্কের ওপরে গাঁজা সেবন করছিল। এ সময় আমি ওদের দুজনকে ডেকে নিয়ে ২৫৪ নম্বর কক্ষে কথা বলি। কাউকে মারধর করা হয়নি।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। তবে ঘটনাটি জানার পর সহকারী প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সোহরাবের বন্ধু জুবায়েরের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সে সোহরাবের সঙ্গেই আছে।’ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর খোঁজখবর রাখছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে অভিযুক্তদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুপাশেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। তার আগে সকালে ক্যাম্পাসে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- নাহিদ ও আসিফসহ যারা সোহরাবকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত ছিল, অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ, গুরুতর আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সব ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে। আজ রবিবারের মধ্যে এসব দাবি না মানলে আবার আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।

এমআই