‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে কলাম লেখায় চাকুরীচ্যুত ঢাবি শিক্ষক মোর্শেদ

‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে কলাম লেখায় চাকুরীচ্যুত ঢাবি শিক্ষক মোর্শেদ

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই একদা প্র্যাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই ফ্যাসিবাদের থাবা গ্রাস করেছে এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠতেও। শুধুমাত্র জাতীয় একটি দৈনিকে কলাম লেখার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

মতপ্রকাশ আর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের এ নজিরবিহীন সিদ্ধান্তটি বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় নেয়া হয়।

শাসকগোষ্ঠীর ইন্ধনে গ্রহণ করা চাকুরীচ্যুতির এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক।

২০১৮ সালের ২৬ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে একটি কলাম লেখেন অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান। লেখাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ‘আপত্তিজনক’ মন্তব্য লেখা হয় বলে একটি চক্রান্তকারী মহল অভিযোগ তুলে।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) পরিচালিত হয় এর স্ট্যাটিউট ও ১৯৭৩ সালের আদেশ (ঢাকা ইউনিভার্সিটি অর্ডার ১৯৭৩) দ্বারা। এই আদেশের কোনো ধারায় লেখা নেই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ করতে পারবে না। বরং স্বাধীন রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন, অনুসরণ ও চর্চার অধিকার রয়েছে। এমনকি কর্মরত শিক্ষকদের রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপূর্ণ পদ গ্রহণেও আইনগত বাধা নেই।

শুধুমাত্র ভিন্নমত প্রকাশের কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলেন অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান।

পত্রিকায় কলামটি প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে অ্যাকাডেমিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত কমিটি ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও ফের একটি চক্রান্তকারী মহল এ নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে।

‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের কথিত একটি সংগঠনকে সপ্তাহখানেক আগে মাঠে নামিয়ে চক্রটি ড. মোর্শেদের চাকরিচ্যুতি ঘটাতে নানা ষড়যন্ত্র ও অপকৌশলের আশ্রয় নেয়। তাদের এই আন্দোলন বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ অনেক গুরুতর নৈতিক স্থখলনজনিত অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া সত্বেও (ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, যৌন কেলেঙ্কারি, পরীক্ষা সংক্রান্ত গুরুতর অনিয়ম, প্লেজারিজম ইত্যাদি) সরকার ও প্রশাসন সমর্থক দলীয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরুপ বৈষম্যমূলক ও পক্ষপাতমূলক আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে বহু শিক্ষক মন্তব্য করেন।

ড. মোর্শেদকে চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে সাদাদল। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বিবৃতিতে বলা হয়- ড. মোর্শেদকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি।

এতে আরো বলা হয়, শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারী হওয়ায় সম্পূর্ণ বিধি-বর্হিভুতভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা এ ধরনের নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত প্রকাশের উপর বাধা প্রদানের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। শুধু ফেসবুকে লেখার কারণে সাম্প্রতিক সময়কালে জেলে যেতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের সময়ে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কাজী জাহিদুর রহমান নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়।একইভাবে মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা সিরাজাম মুনিরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।