ইবির হল থেকে বের করে দেওয়া আন্দোলনকারীদের এনে স্ট্যাটাস দিতে চাপ দিচ্ছে ছাত্রলীগ

ইবির হল থেকে বের করে দেওয়া আন্দোলনকারীদের এনে স্ট্যাটাস দিতে চাপ দিচ্ছে ছাত্রলীগ

ঢাকা, ১৩ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ২২ আন্দোলনকারীকে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। বাদ যায়নি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও। এ খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বই-পত্র নিয়ে তাদের নেমে যেতে দেখা যায়। এ সময় তারা দুই আঙ্গুলের ভি চিহ্ন প্রদর্শন করে নিজেদের বিজয় ঘোষণা ও ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’র সামনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালকে স্যালুট করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। একই সাথে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমাদের হাজারো অনুরোধ করলেও আমরা আর হলে ফিরে আসব না। এদিকে এ ঘটনায় বেশ উৎফুল্ল্য দেখা যায় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা-কর্মীদের।

পরে দুপুর ১টার দিকে সমালোচনার মুখে বের হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের খুঁজা শুরু করে সজল ও তার অন্যান্য সহকর্মীরা। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর ক্যাম্পাস পার্শবর্তী বিভিন্ন ম্যাচে গিয়ে তারা নেমে যাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চায় এবং ভুল স্বীকার করে। পরে তাদের হলে ফিরে আসার অনুরোধ জানালে বড় ভাইদের সম্মান রক্ষার্থে ফিরে আসে।

তবে হলে ফিরে আসার পর সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিনের নির্দেশে সালাউদ্দিন আহমেদ সজল ও রিজভী আহমেদ পাপন তাদেরকে রুমে (৩৩৫ নং) নিয়ে তাদেরকে ফেসবুকে নিজ নিজ টাইমলাইনে ইতিবাচক পোস্ট করতে চাপ দিয়েছে বলে জানিয়েছে ফিরে আসা শিক্ষার্থীরা। পোস্ট করা হয়ে গেলে সজল ও তার সহকর্মীরা বলে যদি সারাদেশে এমন তোলপাড় না হত তবে তোদের কখনই ফিরিয়ে আনতাম না।

আন্দোলনকারীদের ফিরিয়ে আনার পরপরই ইবি শাখা ছাত্রলীগে সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিনের ফেসবুক থেকে একটি পোস্ট করা হয়। যাতে লেখা আছে ‘বন্ধুদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জন্য ওরা হল ছেড়ে চলে গেছিল। এখন সবাই ফিরে এসেছে। এনিয়ে অপপ্রচারের কিছু নেই।’

এদিকে হল থেকে বের করে দেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলেন, ছাত্রলীগ কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় আমাদের বের করে দিয়েছে। এখন চাপে পড়ে আমাদের ফিরিয়ে এনে জোর করে নিজ নিজ টাইমলাইনে পোস্ট দিতে বলেছে। আমরা নাকি নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি করে চলে গেছি। এসব পুরোপুরি বানোয়াট ঘটনা।

এদিকে সকাল-সন্ধ্যায় কোটা আন্দোলন নিয়ে ইবি ছাত্রলীগের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়কে নাকট হিসাবে আখ্যা দিচ্ছেন ছাত্রলীগের একটি অংশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হল ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিল্লাল ও আহসানুর বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সেচ্ছায় স্বজ্ঞানে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনে শামিল হয়েছি।

নাইম, রাসেল, আশরাফুল, আশিক, বলেন, সারা দেশে আমাদের ভাই বোনের মার খাচ্ছে। আমরা এটা সহ্য করতে না পেরে আন্দোলনে যোগ দেই। আমরাও ছাত্রলীগ করি। লালন শাহ হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় আমরাই সামনে ছিলাম। অথচ আজ হুমকি দিয়ে আমাদের অপমানিত করা হলো। আমরা হল থেকে আনন্দের সাথে নেমে যাচ্ছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে হল কেন এর থেকে বেশি কিছু বিসর্জন দিতে রাজি আছি।

হল থেকে নেমে যাওয়া আরেক ছাত্র বলেন, বুধবার রাত ১১টায় সজলসহ বেশ কয়েকজন আমাদের ডাকে। রুমে নিয়ে গাল মন্দ করে বলে কাল সকাল ১০টার মধ্যে হল থেকে নেমে যাবি। অন্যথায় তোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

হলে ফিরে আসার পর ফিরে আসার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, ভুল বুঝে ক্ষমা চেয়েছে। হলে ফিরে আসতে অনুরোধ করেছে। তাদের সম্মানে ফিরে এসেছি। তবে হলে আসার পর ফেসবুকে পোস্ট করতে চাপ দিয়েছে তারা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনের প্রথম দিকে ছাত্রলীগের উভয় গ্রুপের একটি অংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়। পরে হল থেকে সিট বাতিল, দল থেকে বহিষ্কার, মারধরসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিলে তার কোটা অন্দোলন থেকে পিছু হটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও কোটা আন্দোলন দমন করার জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবাধ অংশগ্রহণে ইবির কোটা সংস্কার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্বে রূপ নেয়।

১১ এপ্রিল পুরো দেশের সাথে উত্তাল হয়ে ওঠে ইবি। রাস্তা অবরোধে অচল হয়ে যায় পুরো খুলনা-বরিশাল বিভাগ। দিনের শেষ ভাগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে থাকার কথা জানায় ইবি ছাত্রলীগ। কোটা বাতিল হওয়ায় তারা বুধবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিলও করে। তবে বুধবার সকালে ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। দুপুর পর্যন্ত তারা বিভিন্নভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দিয়েছে। নিজেদের কর্মীদের যারা তাদের আদেশ অমান্য করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

বুধবার সকালে এবং বিকালে কোটার বিষয়ে দুইবার অবস্থান পালটায় ইবি ছাত্রলীগ। আবার বৃহস্পতিবার সকালে ফের অবস্থান পালটায় তারা। বুধবার সন্ধ্যায় কোটার পক্ষে আনন্দ মিছিল করলেও বৃহস্পতিবার সকালে আন্দোলনে অংশ নেওয়া কর্মীদের হল থেকে নামিয়ে দেয়।

এনিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন বিষয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন হয়ে বার বার অবস্থান পরিবর্তনের নাটক মানায় না। এভাবে ছাত্রবান্ধব রাজনীতি করা যায় না। সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করলে ছাত্রলীগ বাংলার ছাত্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেত বলে মন্তব্য করছেন সাধারণ ছাত্ররা।

শিক্ষার্থীরা হল থেকে নেমে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি আমি জানতাম না। ওদেরকে আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯৫৭ঘ.)