বাংলাদেশে ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইনে হয়রানি-ভয়ভীতির শিকার: ইউনিসেফ

বাংলাদেশে ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইনে হয়রানি-ভয়ভীতির শিকার: ইউনিসেফ

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইন সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হওয়ার মতো বিপদের মুখে রয়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে জানানো হয়।

ওই প্রতিবেদনে অনলাইনে শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা মোকাবিলা ও প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর সম্প্রতি ইউনিসেফ পরিচালিত এক জরিপ এবং ‘#এন্ডভায়োলেন্স ইয়ুথ টকস’ শিরোনামে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত একটি ধারাবাহিক আলোচনা অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

বিশ্বব্যাপী ১৬০টির বেশি দেশে ইউনিসেফ পরিচালিত এ জরিপে পাঁচ সপ্তাহ ধরে ১০ লাখেরও বেশি সাড়া আসে।

ইউনিসেফ বলছে, তারা সমীক্ষার জন্য ‘বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শিরোনামে সম্প্রতি দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে এক হাজার ২৮১ জন স্কুল-বয়সী (১০ থেকে ১৭ বছর)‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌শিশুর ওপর জরিপ পরিচালনা করে।’

বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের মধ্যে ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার বিষয়টিও সমীক্ষায় উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ১০ শতাংশ শিশু ধর্মীয় উসকানিমূলক বিষয়বস্তুর মুখোমুখি হওয়ার অভিযোগ করে। কিশোর বয়সীরা (১৬ থেকে ১৭ বছর) অন্য বয়সী শিশুদের তুলনায় অনেক বেশি এ ধরনের উসকানিমূলক বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হয়।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি অ্যাডয়ার্ড বেগবেদার বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা আমরা শুনেছি এবং তারা যা বলছে তাতে পরিষ্কার; ইন্টারনেট একটি নির্দয় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসে ইউনিসেফ তরুণ জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব অনুসরণ করছে ও অনলাইনে তাদের প্রতি সদয় হতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

ইউনিসেফ বাংলাদেশের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু (১০-১৭ বছর বয়সী) ১১ বছর বয়সের আগেই ডিজিটাল জগতে প্রবেশ করতে শুরু করে।

এ ছাড়া শিশুদের একটি বড় অংশ (৬৩ শতাংশ) প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্থান হিসেবে তাদের নিজেদের কক্ষটিকেই ব্যবহার করে। এটা ‘বেডরুম কালচার’-এর ব্যাপকতা নির্দেশ করে, যা অপেক্ষাকৃত কম নজরদারির মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে। বাংলাদেশে উচ্চমাত্রায় অনলাইনে প্রবেশাধিকারের সুযোগ ও ব্যবহারের দিক থেকে ছেলেরা (৬৩ শতাংশ) মেয়েদের (৪৮ শতাংশ) চেয়ে এগিয়ে আছে।

ইন্টারনেটে নিয়মিত সবচেয়ে বেশি যে দুটি কাজ করা হয় তা হচ্ছে, অনলাইন চ্যাটিং (বার্তা আদান-প্রদান) ও ভিডি দেখা। প্রতিদিন গড়ে ৩৩ শতাংশ সময় অনলাইন চ্যাটিং এবং ৩০ শতাংশ সময় ভিডিও দেখা হয়ে থাকে।

সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, ৭০ শতাংশ ছেলে ও ৪৪ শতাংশ মেয়ে অনলাইনে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে। এমনকি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশ তাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে সেই অনলাইন বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার কথাও স্বীকার করে।

ইউনিসেফ বলছে, ক্ষতিকর সামগ্রী, যৌন নিগ্রহ ও অপব্যবহার এবং ভয়ভীতির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি থেকে শিশুরা কখনোই মুক্ত নয়। অনলাইনে হয়রানি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

জাতিসংঘের এই সংস্থা আরো বলছে, অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় যারা অনলাইনে ভয়ভীতির শিকার হয়, তাদের অ্যালকোহল ও মাদকে আসক্ত হওয়ার এবং স্কুল ফাঁকি দেওয়ার হার বেশি। এ ছাড়া তাদের পরীক্ষায় ফল খারাপ করা, আত্মসম্মান কমে যাওয়া ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে।

এমআই