করোনা থেকে শিশুদের সুরক্ষায় করণীয়

করোনা থেকে শিশুদের সুরক্ষায় করণীয়

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বয়স্ক লোকদের মৃত্যুর হার বেশি। তবে শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে। বয়স্ক ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কতটুকু জানা যায়, তার বেশিরভাগই চীন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। চীনে মাত্র ২.৪ শতাংশের বয়স ১৯ বছরের নিচে। তীব্র উপসর্গ লক্ষ করা গেছে এমন রোগীদের মধ্যেও শিশুদের সংখ্যা খুবই কম।

তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে এমন ১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যার বয়স এক বছরেরও কম। ফলে এই মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মতো কঠিন সময়ে শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখা নিয়ে অভিভাবকরা শঙ্কায় আছেন। এ উপলব্ধি থেকে অভিভাবকদের জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বেশকিছু গাইডলাইন দিয়েছে।

সকল সর্দি-কাশি ও জ্বর মানেই করোনা নয়। বাংলাদেশে এই মৌসুমে এমনিতেই ফ্লু’র প্রভাব বেশি। আমাদের দেশে কমন কোল্ড ভাইরাল ফিভার, ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া রোগী খুবই কমন। করোনা আতঙ্কের কারণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণও সাময়িক চেম্বার বন্ধ রাখায় এসব শিশুদের নিয়ে অভিভাবকগণ প্রচ- মানসিকভাবে ভীত হয়ে পড়েছেন।

যদিও হাসপাতালে চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে ও সকল ডাক্তারগণই জাতীয় এই সংকটময় মুহূর্তে মোবাইলে পরামর্শ প্রদান করছেন। তবে কিছু বিষয় জানলে আতঙ্ক থেকে দূরে থাকতে পারবেন। যেহেতু এখন স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরে বসেই সাধারণ সর্দি-জ্বরের চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে, তাই সাধারণ জ্বর হলে প্যারাসিটামল।

সর্দি হলে এন্টি-হিসটাসিন (যেমন : ফেক্সোফেনাডিন), কাশিতে সালবিউটামল গ্রহণ করলে এই সমস্যা কেটে যাবে। তবে ২ মাস থেকে ২ বছরের যদি হাঁচি, কাশি ও কাশির মতো শব্দ হয় সেটাকে নিউমোনিয়া বা করোনা না বলে ব্রংকিতলইনিস বলা হয় সেটা এক ধরনের ভাইরাস আরএসডি দিয়ে হয় এবং উপরোক্ত চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যায়। প্রয়োজনে নেবুলাইস করতে হয়।

আর নিউমোনিয়ার লক্ষণ হলে (ঘন ঘন নিশ্বাস, বুকের খাচা দেবে যাওয়া ও তীব্র জ্বর) হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। তাই আতঙ্কিত হবেন না। যে সকল বাচ্চারা নিউরোলজিক্যাল ডিজিজে আক্রান্ত যেমন (সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রম, আইডি, অর্টিজন) এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এ ধরনের বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

প্রয়োজন না হলে এই সময়ে তাদের শিশুবিকাশ কেন্দ্রগুলোতে না নিয়ে বাসাতেই বিশেষ যতœ নিতে হবে ও শেখানো ব্যায়াম ও ডাক্তারের প্রদত্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

বাচ্চাদের কঠিন সময়ে বড়দের ভালোবাসা এবং মনোযোগ বেশি প্রয়োজন। তাই শিশুদের অতিরিক্ত সময় এবং মনোযোগ দিন। তাদের সঙ্গে আনন্দ করুন, খেলুন এবং স্বাস্থ্যবিধিগুলো চর্চা করুন। স্কুল ছুটিকালীন বাড়িতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং অনুশীলন করতে হবে।

নাকে, মুখে, চোখে হাত দেওয়া যাবে না, হাত মেলানো যাবে না, অতি জরুরি না হলে কোনো প্রকার ভ্রমণ করা থেকে বিরত হোন, সকল প্রকার ভিড় পরিহার করুন, বাড়িতে থাকুন, ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করুন, পর্যাপ্ত পানি পান করবেন, ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার ও ফলমূল বেশি বেশি খান।

নাক, মুখ ঢেকে রাখুন, মাস্ক ব্যবহার করুন, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনা বিস্তার করবেন না, নিজে পরিচ্ছন্ন থাকুন ও চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একদিন এই বিশ্ব করোনামুক্ত হবে এই প্রত্যাশায়।

লেখক : নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর