ডা. মো. ছায়েদুল হক

শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধে করণীয়

শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধে করণীয়

ঢাকা, ১২ জুন (জাস্ট নিউজ) : জন্মের পর শিশুর দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে না। শিশুর রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর ওপর আলো পড়লে আলোর উপস্থিতিতে সেগুলো পরিপূর্ণতা লাভ করতে থাকে। সাধারণত ৬ থেকে ৯ বছরের মধ্যে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। কিন্তু কোনো কারণে চোখের রেটিনায় যদি আলো না পড়ে। যেমন: জন্মগত ছানি হলে লেন্স ঘোলা হওয়ায় রেটিনায় আলো পড়ে না। আবার জন্মগতভাবে চোখের পাতা নিচের দিকে পড়ে গেলে চোখের যে স্বচ্ছ অংশ (কর্নিয়া) দিয়ে আলো প্রবেশ করে, তা যদি ঢেকে যায়, তা হলে পর্যাপ্ত আলো চোখে প্রবেশ করতে পারে না। এ ছাড়া কোনো একটি চোখ ব্যবহার না করলে বা জন্মগত ট্যারা হলে ব্যবহার না করার কারণে ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্রমে কমতে থাকে। এক সময় দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে গিয়ে অন্ধ হয়ে যায়। এটাই অলস চোখ বা অ্যামব্ল্যায়োপিয়া।

চোখ অলস হয়ে পড়লে যদি ৯ বছরের মধ্যে চিকিৎসা করা হয়, তা হলে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু অবহেলা বা অজ্ঞতার কারণে যদি এ সময় পার হয়ে যায়, তা হলে চিকিৎসা করেও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব নয়। বরণ করতে হয় অন্ধত্ব। সঠিক চিকিৎসা করালে তা ভালো হয়। জন্মগতভাবে যদি শিশুর চোখে ছানি থাকে, তা হলে দ্রুত ছানির অপারেশন করাতে হবে।

বয়স ৯ বছর পেরিয়ে গেলে অপারেশন করেও তেমন ফল পাওয়া যায় না। এমন যদি হয়, ৫ বছর বয়সী একটি শিশুর জন্মগত ছানি অপারেশন করে চোখে নতুন লেন্স লাগিয়ে দেওয়া হলো, তার পরও সে ভালো দেখছে না। তখন তার ভালো চোখটি কাপড় দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়। অলস চোখটি দিয়ে বেশি করে কাজ করানো হয়। বেশি কাজ করানোর জন্য চোখের রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

জন্মগতভাবে শিশুর দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে খুব দ্রুত চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা ব্যবহার করাতে হবে। যদি চশমা দিয়েও কাজ না হয়, তা হলে বিশেষ ধরনের চোখের ব্যায়াম বা অ্যাকুলেশন থেরাপি করে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ট্যারা চোখের চিকিৎসা করতে হবে। একটু সচেতন থাকলে অলস চোখের কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়।

শিশু স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই চক্ষুবিশেষজ্ঞকে দিয়ে চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিন। শিশু যদি ঝাপসা দেখে বা চোখের কালোমণি ধূসর বা সাদা দেখা গেলে, দূরের জিনিস ভালো না দেখে বা টেলিভিশন খুব কাছ থেকে দেখে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০১৪ঘ.)