কারাগার থেকেই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অংশ নিল ছৈয়দ!

কারাগার থেকেই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অংশ নিল ছৈয়দ!

কক্সবাজার, ৫ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : দীর্ঘ ৮ মাস ধরে হত্যা মামলায় কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দি আছেন টেকনাফের বাহারছড়া হাজমপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে ছৈয়দুল ইসলাম (২২)। কিন্তু জেলে থেকেও গত ১ ডিসেম্বর পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় তিন মামলায় আসামি হয়েছেন ছৈয়দ।

সূত্র জানায়, গত ১ ডিসেম্বর টেকনাফ শামলাপুরের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান ওই এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে হাবিব উল্লাহ। এ ঘটনায় এজাহারনামীয় ২৩ জনসহ আরো অজ্ঞাত ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।

মামলাগুলো হলো, জিআর-৭৫৮/১৮, জিআর-৭৫৯/১৮ ও জিআর-৭৬০/১৮। এই তিন মামলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের অপরাধে ১৩ নম্বর আসামি করা হয় কারাবন্দি ছৈয়দুল ইসলামকে।

সূত্রমতে, চলতি বছরের গত ৬ এপ্রিল টেকনাফের বাহারছড়া ৭নং ওয়ার্ডের হাজমপাড়ার ময়না খাতুন নামের এক মহিলা নিহতের ঘটনায় টেকনাফ থানায় জিআর মামলা নং ১৮১/১৮ দায়ের করেন নিহতের ভাই আবদুল মান্নান। ওই মামলায় এজাহারনামীয় সাতজন আসামির মধ্যে ছৈয়দুল ইসলাম এক নম্বর আসামি।

গত ১১ এপ্রিল থেকে তিনি কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন। কিন্তু পুলিশের দেয়া মামলা অনুসারে গত ১ ডিসেম্বর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।

স্থানীয়দের বলছেন, পুলিশ স্থানীয় কোন্দলকে পুঁজি করে মামলায় ধান্ধাবাজির কারণে এসব হচ্ছে। আর পুলিশি কার্যক্রম নিয়ে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। না হয় আট মাস ধরে কারাবন্দি আসামি কীভাবে সরকারি কাজে বাধাদান ও ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ছিনতাইয়ে বন্দুকযুদ্ধে অংশ নেয়ার অপরাধে মামলায় আসামি হয়? মূলত স্থানীয়ভাবে প্রতিপক্ষ থেকে লাভবান হয়ে এই ন্যক্কারজনক কাজটি করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার কারা সুপার বজলুর রশীদ আখন্দ বলেন, ছৈয়দুল ইসলাম টেকনাফ থানার জিআর মামলা নং ১৮১/১৮ এর আসামি হিসেবে প্রায় ৮ মাস ধরে কারাবন্দি। কারাগারে থেকে বাইরের কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে কারাগারে থেকেই তিন মামলাতেই ১৩ নম্বর ক্রমিকে আসামি হওয়ার ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ১ ডিসেম্বর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হাবিবকে ঘটনার আগেই আটক করা হয়েছিল। ওই সময় হাবিব পুলিশের কাছে অনেক জনের নাম বলেছে। যারা তার সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসা করত। তার মধ্যে ছৈয়দুল ইসলাম একজন।

তিনি বলেন, হাবিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ছৈয়দুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তবে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ করে যে মামলা করা হয়েছে সেখানেও কেন ছৈয়দুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে জানতে চাইলে ওসি সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি। একপর্যায়ে বলেন, যদি নিরপরাধ কেউ আসামি হয় তাহলে তদন্তপূর্বক বাদ দেয়া হবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবি এম মাসুদ হোসেন বলেন, অনেক সময় আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মামলায় আসামি দেয়া হয়। অনেক সময় আটক ব্যক্তিকে তার সহযোগী কেউ আছে কিনা? জানতে চাওয়া হয়। আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আসামি করা হয়। এরপরও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন বলে জানান পুলিশ সুপার।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০২৩ঘ.)