নারী পোশাক শ্রমিককে গাড়িতে ধর্ষণ, অপমানে আত্মহত্যা

নারী পোশাক শ্রমিককে গাড়িতে ধর্ষণ, অপমানে আত্মহত্যা

পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে ঘুরতে গিয়ে গাড়িতে দুই দফা ধর্ষণের শিকার হয়ে অপমানে আত্মহত্যা করেছে এক কিশোরী। গত ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার পাঠানটুলি এলাকায় ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। এ ঘটনায় মেয়েটির বোন মামলা করার পর পুলিশ রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবারের গাড়িচালক মো. বাদশাকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত শনিবার গভীর রাতে পাঠানটুলি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মো. সফি উদ্দিনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বাদশা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জবানবন্দি গ্রহণের পর বাদশাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এরই মধ্যে তার গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। বাদশার বাসা থেকে মেয়েটির ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও আইডি কার্ড পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার মো. আশিকুর রহমান জানান, বাদশার বাসা নগরীর ডবলমুরিং থানার পাঠানটুলি এলাকায়। ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরীর বাসাও একই এলাকায়। মেয়েটি নগরীর আগ্রাবাদে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। বছরখানেক আগে সেখানে বাদশাও চাকরি করত। আত্মহত্যার পর ওই কিশোরীর বোন ডবলমুরিং থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। বাদশা নিয়মিত মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করত বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন জানান, যৌন হয়রানির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর আগে স্বজনদের কাছে ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়ে মেয়েটি কোনো অভিযোগ করেনি। বাদশাকে গ্রেপ্তারের পর পুরো বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে। পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর বাদশা উবারে প্রাইভেট কার চালাতে শুরু করে। পোশাককর্মী মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলেও দাবি করেছে সে।

বাদশা জানায়, ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় কারখানা ছুটির পর সে মেয়েটিকে তার প্রাইভেট কারে নিয়ে বেড়াতে বের হয়। একপর্যায়ে নির্জন একটি স্থানে নিয়ে মেয়েটিকে গাড়ির ভেতরেই সে দুইবার ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে মেয়েটি জ্ঞান হারায়। এ সময় বাদশা অজ্ঞান মেয়েটিকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে পাঠানটুলিতে নিজের বাসায় যায়। বাসা থেকে বাদশা ও তার মা মিলে মেয়েটিকে নিয়ে যায় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক মেয়েটির শরীর দুর্বল উল্লেখ করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন। পরে বাদশা ও তার মা মেয়েটিকে আবারও নিজেদের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে রাত দেড়টার দিকে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায় বাদশা। খবর পেয়ে মেয়েটির ভগ্নিপতি হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যান। পরদিন সকালে বোন কর্মস্থলে যাওয়ার পর একা বাসায় মেয়েটি আত্মহত্যা করে।

পরিদর্শক জহির জানান, হাসপাতালের এক আয়াকে মেয়েটি বলেছিল, বাদশা তার মুখ চেপে ধরার পর সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এর পর কী হয়েছে সে কিছুই জানে না। মুখ চেপে ধরার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে ধর্ষণের প্রসঙ্গ উঠে আসে। বাদশাকে গ্রেপ্তারের পর সে-ও জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করেছে।

এমআই