উচ্ছেদের কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ১৬ শিশু শিক্ষার্থী

রেল উচ্ছেদ অভিযানেও রেল প্রশাসনের দূর্নীতি!

রেল উচ্ছেদ অভিযানেও রেল প্রশাসনের দূর্নীতি!

চট্টগ্রামের রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রেলের কর্মচারীদের কোয়াটারের পাশে গড়ে তোলা বাড়তি ঘর গুলো অভিযানে সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দিলেও অভিযান পরিচালনা রেলওয়ে কতৃপক্ষের কর্মকর্তারা শ্রমীকলীগের নেতাদের কোয়াটার ও প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবৈধভাবে গড়ে তোলা কোয়াটারের পাশের একটি রুমেও আছড় পড়েনি অভিযান পরিচালনাকারী দলের। এই উচ্ছেদের কারণে জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি উচ্ছেদ করা এলাকার কোমলমতি ১৬ শিক্ষার্থী।

ইতিমধ্যে এই উচ্ছেদ অভিযান নানা কারণে বির্তকিত হয়েছে। বিশেষ করে স্বজনপ্রীতি, দলীয় প্রভাব, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাসহ নানা অভিযোগের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা/পূর্ব ইশরাত রেজার কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তে উচ্ছেদে ১৬ শিশু শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হওয়ার বিষয়টি।

ঝাউতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মহসিন জাষ্ট নিউজ বিডি.কমকে বলেন, ‘আমার বিবেচনায় আসে না রেলওয়ে কতৃপক্ষ কোন বিবেচনায় এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলো? এ উচ্ছেদের কারনে বার্ষিক পরীক্ষায় এর প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন।

শ্রমীকলীগের ও প্রভাবশালী কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব ঘর উচ্ছেদ না করায় অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রেলওয়ে সাধারণ কর্মচারী ও ভুমি হিন অসহায় বস্তির লোকজন।

রেলওয়ে ওয়ার্কশপ ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন কর্মচারী রেলওয়ে কতৃপক্ষের অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ বলে তারা আরো জানান, সাধারণ কর্মচারীদের কোয়াটারে রেল কতৃপক্ষের বরাদ্দ একটি মাত্র গ্যাসের চুলা ব্যাবহার করার পরেও শ্রমীকলীগ ও প্রভাবশালী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাসায় অবৈধ ভাবে ৪/৫ টি গ্যাসের চুলা ব্যাবহার করলেও তাদের এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়নি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা কতৃপক্ষ।

এসব রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ বেশীদিন না হলেও এরা রেলওয়ে নিয়োগ বানিজ্যের দূর্নীতির মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। এদের একেক জন দূর্নীতি করে বিপুল অর্থের মালিক বনে গেছেন। এদের মধ্যে রেলওয়ে বিভাগের সিপিও প্যানশনের হেড সহকারী ও শ্রমীকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনের চাকরির মেয়াদ ১৫ বছর হলেও দূর্নীতির মাধ্যমে গত ১০ বছরে বিপুল পরিমান অর্থের মালিক বনে গেছেন শ্রমিকলীগের এই নেতা।

ব্যাংকে জমা আছে নামে বেনামে বিপুল অর্থ। শ্রমীকলীগের এইনেতা চলাফেরা করে এসি গাড়িতে গাড়ির নাম্বার হচ্ছে (চট্র মেট্রো খ-১১-০৫-৯২)। তার গাড়ি চালক মনোয়ারকে ২ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়ে মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেয়।

রেলওয়ে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জাষ্টনিউজ বিডি.কমকে জানান,
আমরা দীর্ঘদিন রেলওয়ে চাকরী করলেও গাড়ি বাড়ি তো দুরের কথা সন্তানদের পড়াশোনার খরছ যোগাতেও হিমশিম খাচ্ছি। অথচ শ্রমীকলীগের এই নেতার চাকরির মেয়াদ কম হলেও বিভিন্নভাবে দূর্নীতির মাধ্যমে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে গত ১০ বছরে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন।

তার নামে বরাদ্দকৃত রেলওয়ে বাসার বাউন্ডারি দেয়ালে খোদাই করে ডিজাইনের করার পর গেইটে লাগানো হয়েছে সিসিটিভির ক্যামেরা। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘রেল কতৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানে মামুনের বাসাসহ তার বাসার আশেপাশের একটি কোয়াটারেও অবৈধভাবে গড়ে তোলা সেমি পাকা ঘর গুলোতে আঁচড় ও দেয়নি উচ্ছেদ অভিযান কতৃপক্ষ।

রেল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় ১নং কার্যকরী সভাপতি শেখ লোকমান হোসেনের মেয়ের ৩০টি অবৈধ স্থাপনা থেকে যায় সম্পূর্ণ অক্ষত। আমবাগান মসজিদের রাস্তার বিপরীত শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ লোকমান হোসেনের মেয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল আইন কর্মকর্তা (আদালত পরিদর্শক গ্রেড-১) জিনিয়া নাসরিনের এ/২২ আমবাগান বাসাটির ভেতরে রয়েছে প্রায় ৩০টি অবৈধ স্থাপনা যেগুলো ছুঁয়েও দেখেনি অভিযান পরিচালনা রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ।

এ বিষয়ে জিনিয়া নাসরিন জাষ্টনিউজ বিডি.কমকে বলেন, বাসাটি আমি ২০১৫ সালে বরাদ্দ পাই। আবেদনের কারণে রেল বরাদ্দ দিয়েছে, আমি তো জোর করে নেইনি। অবৈধ স্থাপনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এগুলো আমার আগে যিনি ছিলেন তার সময়ে করা।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিভিশনাল অফিসার বোরহান উদ্দিন অনিয়মের কথা স্বীকার করে জাষ্টনিউজ বিডি.কমকে বলেন, রেল শ্রমিকলীগ নেতার মেয়ের বাসা বরাদ্দটি নিয়মবহির্ভূত। যেহেতু এই বাসা বরাদ্দ ৩-৪ বছর আগে পেয়েছে তাই তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য থেকে বিরত থাকেন। তবে অনান্য বিষয়ে অভিযোগ গুলোর দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে রেল কতৃপক্ষের এই উচ্ছেদের কারনে উচ্ছেদকৃত এলাকার বিভিন্ন স্কুলের জেএসসি ও পিএসসি পরিক্ষার ১৬ জন পরিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তার মধ্যে সামনে আছে বার্ষিক পরীক্ষা।

পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান কতটা যুক্তিসম্মত এমন প্রশ্ন করা হলে রেলওয়ে পাহাড়তলী ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুবউল করিম জাষ্ট নিউজ বিডি.কমকে বলেন, তারিখগুলো পূর্বের নির্ধারিত আর আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেভাবে বলেন আমার কাজ তা পালন করা।