করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক

করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চায়ের দোকানে আড্ডাপ্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এবং যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। তবে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, সেখানে হোম কোয়ারেন্টিন মানা হচ্ছে না। তারা জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রেখেছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে অনেককে একসঙ্গে বসে দোকানে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বিশাল জনঘনত্ব ক্যাম্পগুলোতে করোনা সংক্রমণ ঘটলে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সেবা সংস্থার কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা।

সরেজমিনে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে ঢুকে চোখে পড়ে লোকজনের আনাগোনা। এত লোকজনের ভিড়, কে কোথায় যাচ্ছেন বোঝা মুশকিল। খোলা রয়েছে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, কাপড় ও চায়ের দোকান। আড্ডা জমজমাট। এ সময় এক চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দেখা যায় ১০ জনের বেশি বয়স্ক লোকজনকে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এমনই বলে জানা গেছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুরাচায়ের দোকানে বসা একজন বয়স্ক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হাসিম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালে বের হয়ে এখানে সবাই মিলে কথা-বার্তা বলছি। একবারে জোহরের নামাজ পড়ে ঘরে যাবো। করেনা ভাইরাস (অসুখ) রোগ একটা এসেছে বলে শুনেছি। কিন্তু কীভাবে তা থেকে রক্ষা পাবো তা জানি না। এ থেকে বাচঁতে যে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না, তাও জানি না। এখানে এই ভাইরাস নিয়ে কোনও সংস্থার পক্ষ থেকে কথা বলা হয়নি।’

লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি নূর বশর বলেন, ‘ক্যাম্পে ঘনবসতি হওয়ায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছি আমরা। কিন্তু করোনা রোধে ব্লকে ব্লকে গিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনেকে নিয়ম মানছেন না। আগের মতো স্বাভাবিক চলাচল করছেন। এখানে সব চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিশু ও বৃদ্ধরা।’

এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন শরণার্থী রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা সৈয়দ উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে ভয়ও আগের তুলনা বেড়েছে। কেননা করোনা ছোঁয়াচে রোগ। তাছাড়া ক্যাম্পে ঘিঞ্জি বসতি, তাই ঝুঁকিটাও বেশি।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিত্র তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ রোধে চোখে পড়ার মতো কোনও কার্যক্রম হয়নি। কীভাবে এই ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়, সেটি অনেকে জানেন না।’

টেকনাফ লেদা শরণার্থী শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষায় হাত ধোয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সচেতনমূলক কার্যক্রম করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কিছু লোকজন তা অমান্য করে জীবন যাত্রা স্বাভাবিক রেখেছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’

করোনা রোধে প্রচারণাকালে নৌবাহিনীর কক্সবাজার জেলা সমন্বয়ক কমান্ডার এম রাজিবুল ইসলাম বলেছেন, ‌‘করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এখানে জনঘনত্বে লোকজনের বসবাস। যদি এখানে কেউ আক্রান্ত হন, তবে তার থেকে সবখানে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।’

তিনি বলেন, ‌‘এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এখন সবার উচিত হবে, কোনোভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যেন লোকজন বেরিয়ে না আসে তা নিশ্চিত করা। নৌবাহিনী ক্যাম্প তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশপাশি স্থানীয় মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার সুপারসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা যেন স্ব স্ব এলাকায় করোনা বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে।’

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, ‘রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ঝুঁকিটা বেশি। তবে এ রোগ যেন শিবিরে না ছড়ায় সে ব্যাপারে প্রতিনিয়ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’ সুত্র: বাংলাট্রিবিউন।