পুঁজিবাজারে ৮ মাসে মূলধন কমেছে ২১ হাজার কোটি টাকা

পুঁজিবাজারে ৮ মাসে মূলধন কমেছে ২১ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : নির্বাচনের আগে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা দরপতন চলছে। দিন দিন বাজার পরিস্থিতি আরো নাজুক হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই কমছে লেনদেন ও বিভিন্ন শেয়ারের দাম। মূল্যসূচক ও বাজার মূলধনে এর প্রভাব পড়ছে। ফলে গত আট মাসে ডিএসইর বাজার মূলধন হারিয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু চলতি মাসের ১১ কার্যদিবসেই মূলধন কমেছে ২ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া তারল্য সংকটের কবলে লেনদেন কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বুধবার লেনদেন হয় মাত্র ৩৯৭ কোটি টাকা, যা গত ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন। গত এক সপ্তাহে সূচক কমেছে ১০০ পয়েন্টের ওপরে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে মানুষের মনে এক ধরনের আস্থা সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা আশঙ্কা বাড়ছে। তাদের মতে, ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও লোকসান গুনছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও একই ভূমিকা পালন করছে।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের পর যদি কোনো কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, কিংবা ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে কোম্পানিগুলো তাদের ভালো রিটার্ন দিতে পারবে না এমন শঙ্কা কাজ করছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এ কারণে বর্তমানে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। সবাই পুঁজির নিরাপত্তার কথা ভেবে বাজার থেকে টাকা বের করে নিতে যাচ্ছেন, যার জের ধরে প্রতিনিয়ত কমছে শেয়ার দর।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত এক টানা বাজার মূলধন কমেই চলেছে। বর্তমানে ডিএসইর বাজার মূলধন ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা, যা ৮ মাস আগে ৩০শে এপ্রিল ছিল ৪ লাখ ৬২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ৮ মাসে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এছাড়া শুধু চলতি মাসের ১১ কার্যদিবসেই (১৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত) বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। ২রা ডিসেম্বর ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা।

এদিকে টানা সাতদিন নিম্নমুখী থাকার পর গতকাল বুধবার দরপতন থেমে সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ হওয়ার পাশাপাশি কেনাবেচাও আগের দিনের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২৪২ পয়েন্টে। তবে অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ০.৩১ ও ডিএসই-৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২০১ ও ১৮৩৬ পয়েন্টে। ডিএসইতে ৩৯৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন থেকে লেনদেন ৬৩ কোটি টাকা বেড়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৩৪ কোটি টাকা।

এদিকে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪১টি কোম্পানির মধ্যে ২০৯টি বা ৬১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে দাম কমেছে ৭৮টি বা ২৩ শতাংশ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪টি বা ১৬ শতাংশ কোম্পানির।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। এদিন কোম্পানির ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ারের ১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৩১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৫১টির, কমেছে ৬৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টির দর। সিএসইতে মোট ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা একটু ভয়ে আছেন। তিনি বলেন, এখন মুনাফার চেয়ে বিনিয়োগ রক্ষা করার নীতিতে চলছেন বিনিয়োগকারীরা। নির্বাচনের পরে অবস্থা বুঝে বাজারে ফিরবেন তারা।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এখন বিনিয়োগকারীরা নিজেদের পুঁজি বাঁচাতে যতটুকু ভূমিকা পালন করা দরকার তার বেশি করতে চাচ্ছেন না। ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে যাচ্ছে না কেউ।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯২২ঘ.)