পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় ত্রিপক্ষীয় কমিটি

মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় ত্রিপক্ষীয় কমিটি

পোশাক শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেড় মাস আগে ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য শ্রমিক, মালিক ও সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার নব নিযুক্ত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে রাজধানীর দৈনিক বাংলায় শ্রম ভবনে জরুরি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

টানা তিন দিন পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা সরকারি মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বেশ কিছু এলাকায় রাস্তায় নেমে আসে। রাজধানীর উত্তরা ও সাভারে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

এমন পরিস্থিতি উত্তরণে বৈঠকে শেষে নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকদের কারো বেতন কমবে না। তিনি শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে বলেন, সাইবার ক্রাইম শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃংখলা সহ্য করা হবে না। কেউ বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে তা দমনে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীকে কঠোর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আরো বলেন, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে কারো বেতন কমবে না। এজন্য ৫ জন শ্রমিক প্রতিনিধি, ৫ জন মালিক প্রতিনিধি এবং সরকারের পক্ষে বাণিজ্য ও শ্রম সচিবের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ঘোষিত মজুরি সমন্বয়ের কাজ করবে। এক মাসের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট দেবে। যদি দেখা যায় কারো বেতন কমে গেছে, সেটা অবশ্যই বাড়ানো হবে। এমাসের কম বেতন, আগামী মাসের বেতনের সঙ্গে বকেয়া হিসেবে পাবেন।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, একবার বেতন বাড়লে তা কমে না। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হবে। তবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বরদাশত করা হবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক বান্ধব। কোনো পক্ষকে প্রধানমন্ত্রী ঠকান না। এরপরও শ্রমিকরা নায্য বেতন না পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শ্রমিক প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মাহবুর রহমান ও আমিরুল হক আমিন বলেন, তিনটি গ্রেডের বেতন নিয়ে সমস্যা আছে। নতুন মজুরি কাঠামোতে এসব গ্রেডে মূল বেতন কমে গেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে আন্দোলন হচ্ছে প্রকৃত শ্রমিকরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ট্রেড ইউনিয়নের কেউ আন্দোলনে নেই। তিনি শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান। তবে মালিকপক্ষ বেতন কমা ও শ্রমিকদের দাবি করা অন্যান্য সমস্যা অস্বীকার করেন।

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো মঙ্গলবারও রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকেরা।

গত রবিবার ও সোমবার উত্তরা এলাকায় অবস্থিত গার্মেন্টগুলোর শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলেও মঙ্গলবার তাদের সঙ্গে মিরপুরের কালশী এলাকার কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছেন।

এতোদিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেও মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের বিক্ষিপ্ত ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। শ্রমিকরাও সড়ক অবরোধ করে ভাংচুর করেছে। দক্ষিণখান এলাকায় একটি কারখানাতেও ভাংচুর চালানো হয়েছে।

দিনভর অচলাবস্থার পর বিকেলের দিকে বিমানবন্দর সড়কসহ উত্তরার বিভিন্ন এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে ওইসব এলাকার লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

পুলিশ উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও বিমানবন্দর সড়ক অবরোধের ফলে মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এজন্য পুলিশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে এসব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, কোথায়ও কোথায়ও শ্রমিকরা পুলিশের উপর চড়াও হয়েছে। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সড়ক স্বাভাবিক রেখেছে। বিকালের দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

একে/