বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিলো বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, ২০১৮ সালে অর্থনীতি যে গতিতে এগিয়েছে, সেটি ধরে রাখা যায়নি। ২০১৮ সালে বিশ্বে ৩ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও ২০১৯ সাল শেষে এটি ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে যেতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা কাটেনি। বেশ কয়েকটি উদীয়মান দেশ গেল বছর অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে ছিল। অনেক দেশের পরিস্থিতির অবনতি লক্ষ করা গেছে।
প্রতিবেদনে প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টালিনা জর্জিয়া উল্লেখ করেছেন, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে অর্থনীতির সবগুলো সূচকেই চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু শেষের দিকে এসে এর গতি কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে।
বছরে দুইবার জানুয়ারি ও জুনে বিশ্বব্যাংক সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরে। প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন, বিশ্বের দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমন করতে আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা এবং উত্পাদনে ধীরগতির কারণে বিশ্বব্যাংক ২০১৮ সালে বিশ্ব প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন আগের চেয়ে কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ২০১৯ সালে তা আরও কমে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিলো। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে দুই দেশই অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসেও এমনটি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ২০১৯ সালে এই হার আড়াই শতাংশে নেমে যেতে পারে। অন্যদিকে চীন গেল বছর সাড়ে ৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও এ বছর প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
প্রতিবেদনে চলতি বছর অর্থাত্ ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ভুটানে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আর্থিক খাতের সমস্যাগুলো আরো গভীর হয়েছে। ফলে অতি দারিদ্র্য বিলোপ করার লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে। দেশগুলোর অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে সাধারণ মানুষের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বাড়াতে হবে। সেইসাথে সামাজিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে জিডিপির তুলনায় সরকারের ঋণ গেল চার বছরে ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে। ঋণের জন্য দেওয়া সুদ পরিশোধে খরচ বৃদ্ধির চাপ বাড়বে। এজন্য দেশগুলোকে অভ্যন্তরীণ উত্স হতে কর আদায় বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বছরের শুরুতে বিশ্বঅর্থনীতির পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের ঋণ বাড়ছে। আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৮৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মূলত অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এর পাশাপাশি রেমিট্যান্স এবং সরকারি ব্যয় প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তবে খাদ্য ও মূলধনী পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই প্রবৃদ্ধিরও চালিকা শক্তি হবে অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয়। তা ছাড়া মেগা প্রকল্পসহ সরকারেরর অবকাঠামো খাতে বড় বিনিয়োগের প্রভাবও থাকবে। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও একে জোরালো উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।
উল্লেখ্য, প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এ প্রাক্কলন সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। চলতি অর্থবছরে সরকারের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে গত অর্থবছরের অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিভিন্ন সময়ে এবার প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়াবে বলে আভাস দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরেও অর্থনীতিতে তেজিভাব থাকবে। বেসরকারি খাতে ভোগ ব্যয় এবং বড় প্রকল্পের বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হবে।
একে/