নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি না করার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের

নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি না করার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের

রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্যে আর মাংস বিক্রি না করার ঘোষণা দিয়েছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। এখন থেকে তারা নিজেদের ঠিক করা মূল্যে মাংস বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।

রাজধানীতে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম।

রমজান মাস শুরুর আগের দিন ৬ মে পুরো নগরের জন্য মাংসের দাম নির্ধারণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রতি কেজি দেশি গরুর মাংসের দাম ৫২৫, বিদেশি গরু ৫০০, মহিষ ৪৮০, খাসি ৭৫০, ভেড়া বা ছাগী ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) একই দাম নির্ধারণ করে।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম জানান, ২৬ রমজান (শুক্রবার) থেকে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত বিক্রয়মূল্য মেনে আর মাংস বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিএনসিসির অসহযোগিতার কারণেই নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি আর সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তার অভিযোগ, গাবতলী গরুর হাটে মাংস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকার–নির্ধারিত খাজনা থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। হাটের ইজারাদারকেও কোনো প্রকার জবাবদিহির আওতায় আনেনি ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন লোকসান দিয়ে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই নির্ধারিত মূল্যে আর মাংস বিক্রি করা সম্ভব না বলে তিনি জানান।

মাংস ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মাংসের মূল্য নির্ধারণী সভায় মাংস ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয় দখলমুক্ত করা, সরকার–নির্ধারিত গরুর হাটের খাজনা বাস্তবায়ন এবং হাটের ইজারাদারকে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু ডিএনসিসি বিষয়গুলোর কোনোটিতেই সহযোগিতা করেনি।

রবিউল অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাংস ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেন। কিন্তু চাঁদাবাজি ও খাজনার অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে হাট ইজারাদার কোটি কোটি টাকার আদায় করলেও র্যাব–পুলিশ, ভোক্তা অধিকার, সিটি করপোরেশন তা আমলেই নিচ্ছে না। ইজারার শর্ত মানানোর দায়িত্ব ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার হলেও ওই কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে নীরব।

গত কয়েক বছরে মাংসের দাম কেজিতে ৩০০ টাকা বেড়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গাবতলীর হাট ব্যবস্থাপনা ও হাট ইজারাদারকে শর্ত মোতাবেক নজরদারি করা হলে রাজধানীতে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু এসব অনিয়ম আর অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিএনসিসির কাছে একাধিকবার আবেদন করেও কোনো উত্তর না পাওয়ায় তাদের নির্ধারিত মূল্যে মাংস আর বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না।

নির্ধারিত মূল্য না মানা নিয়ে ব্যবসায়ীদের এমন ঘোষণার বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে জানতে চাইলে তারা এই বিষয়ে অবগত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে, তাদের অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তাঁরা।

ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এবং চাঁদাবাজির বিষয়টি ডিএনসিসি ও ঢাকা মহানগর পুলিশকে দেখার জন্য বলা হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে তাদের অগ্রগতি কী, তা খোঁজ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বাজার তদারক করে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মাংসের মূল্য প্রত্যাহার নিয়ে তাকে দেওয়া মাংস ব্যবসায়ীদের কোনো চিঠি তিনি পাননি বলে জানান।

এমআই