পুঁজিবাজারে ৭ বছরের সবচেয়ে বড় ধস

পুঁজিবাজারে ৭ বছরের সবচেয়ে বড় ধস

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এক দিনেই বিরাট ধসের কবলে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক দিনেই ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ পড়ে গেছে। দিন শেষে ২৭৯ পয়েন্ট হারিয়ে বাজার ৪ হাজার ৮ পয়েন্টে এসে থেমেছে।

সাত বছর আগে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি নতুন এই সূচক চালু হওয়ার পর এত বড় ধস আর ঢাকার বাজারে দেখা যায়নি।

এর আগে ২০১৩ সালের ৩ মার্চ ডিএসইএক্স ২০৭ দশমিক ৩ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ২২ শতাংশ পড়ে গিয়েছিল। এতদিন সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় ধস।

ডিএসইএক্স ‍সূচকের আগে ডিএসই জেনারেল ইনডেক্সকে (ডিজিইএন) এ বাজারের প্রধান সূচক গণ্য করা হত। দুই সূচক মিলিয়ে হিসাব করলে সোমবারের আগে বড় পেতন হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি। সেদিন ডিজিইএন প্রায় ৩০৪ বা ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ পড়েছিল।

সোমবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক সিএএসপিআই পড়েছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে হয়েছে ১২ হাজার ৩৪৩ পয়েন্ট।

এর আগে টানা তিন কর্মদিবসে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৮০ পয়েন্ট পড়ে যাওয়ার পর রোববার বিকেলে দেশে প্রথমবারের করোনাভাইরাস রোগী সনাক্ত হওয়ার খবর আসে।

সোমবার লেনদেনের শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় ঢাকার বাজার। প্রথম ৬ মিনিটেই সূচক হারায় আরও ১০০ পয়েন্ট। এরপর দুই দফা সামান্য বাড়লেও পরে ধারাবাহিকভাবে সূচক কমতে থাকে। বিক্রির চাপে বহু কোম্পানির শেয়ার ক্রেতাশূন্য হয়ে যায়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে।’

এদিকে রাশিয়া ও সৌদি আরবের টানাপড়েনে সোমবার তেলের দাম হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও ধস নামে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মত ভারত ও পাকস্তানেও বড় ধরনের সূচক পতন ঘটে।

পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক কেএসই-১০০ সাড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি পড়ে গেলে সেখানে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর করোনাভাইরাস আতঙ্ক এবং ইয়েস ব্যাংক কেলেঙ্কারির জেরে ভারতের মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জের চূচক সেনসেক্স পড়ে যায় ৫.১৭ শতাংশ, যা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন।

শাকিল রিজভী বলেন, ‘এসব খবরও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে প্যানিকড সেল (আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি) স্থায়ী হয় না। আমাদের বাজারেও এ পতন স্থায়ী হবে না।’

সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর কমেছে ৩৫২টির, বেড়েছে ২টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে একটির দাম।

সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৫৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর কমেছে ২৪৯টির, বেড়েছে ৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে চারটির দাম।

ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৪৯৯ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড, যা আগের দিনের থেকে প্রায় ৭১ কোটি টাকা বেশি। সিএসিইতে আগের দিনের চেয়ে লেনদেন ৫০ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।

জানুয়ারিতে বড় ধসের পর পুঁজিবাজার জাগাতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ব্যাংকগুলোকে ‘বিশেষ তহবিল’ গঠনের সুযোগ দেওয়ার পর থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। টানা কয়েক দিন লেনদেনের পাশাপাশি সূচক বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাও ফিরতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বাজারে ফের লেনদেন ও সূচক কমতে শুরু করে।