চলতি মাসের ১৫ দিনেই পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮৪ শতাংশ

চলতি মাসের ১৫ দিনেই পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮৪ শতাংশ

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় সব দেশই এখন আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউনে। এ অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে এর ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকেও। বিজিএমইএর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশে বাংলাদেশের বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য প্রায় প্রতিটি দেশেই এখন করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আংশিক বা পূর্ণ লকডাউনে রয়েছে প্রায় সব দেশ। বাংলাদেশেও অঘোষিত লকডাউন চলছে গত ২৬শে মার্চ থেকে। একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার কারণে দেশের রপ্তানি কার্যক্রম বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবেই কমছে।

গত মাসেও বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। রপ্তানিতে পতনের এ ধারাবাহিকতা বজায় ছিল এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনেও।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিজিএমইএ জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে (১-১৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। অন্যদিকে গত বছরের ১-১৫ এপ্রিলের মধ্যে পণ্যটি রপ্তানি হয়েছিল ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ডলারের। অর্থাৎ পণ্যটির রপ্তানি কমেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৯ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার মূল্যের। সে হিসাবে পণ্যটির রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

চীনের উহানে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় গত ডিসেম্বরের শেষে। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে তা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে জানুয়ারি থেকেই দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিম্নমুখিতা বজায় রয়েছে।

বিজিএমইএর তথ্য বলছে, ১ হাজার ১৪০ কারখানার মোট ৩১৬ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এসব ক্রয়াদেশের আওতায় ছিল ৯৭ কোটি ৯০ লাখ পিস পোশাক। অন্যদিকে এসব কারখানার কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ২২ লাখ ৬০ হাজার।

বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, পোশাক রপ্তানি পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে পোশাক খাতের অবস্থা কতটা নাজুক। সংকট এখনো চলমান।

চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) শুরু থেকেই রপ্তানি নিয়ে কিছুটা খারাপ সময় পার করছিল তৈরি পোশাক খাত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এর পরের মাসেই বড় ধরনের পতন হয় পোশাক রপ্তানির। সে সময় রপ্তানি হ্রাস পেয়েছিল ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। রপ্তানিতে এ নেতিবাচক ধারা বজায় থাকে নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৯ দশমিক ৭৯ ও ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এরপর ডিসেম্বরে কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি। ওই সময় বাংলাদেশ থেকে পণ্যটির রপ্তানি বেড়েছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। কিন্তু জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ধসের ধারায়ই রয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি। এর মধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ২ দশমিক ৯৮ ও ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে পোশাক রপ্তানি ৫০০ কোটি ডলার হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিজিএমইএ। সংগঠনটির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হবে ৩৭০ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮৬০ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এ হিসাবে তিন মাসের সম্মিলিত রপ্তানি হ্রাস পেতে যাচ্ছে ৪৯০ কোটি ডলার বা ৫৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।