চরম দুর্ভোগে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা

চরম দুর্ভোগে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আগে টানা দর পতনে লোকসান দিতে দিতে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর অবস্থা নাজুক। এর মধ্যে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে করোনা মহামারি। এই মহামারির কারণে বন্ধ আছে শেয়ার কেনা-বেচা। ছুটিতে আছে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারহাউজগুলো। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা ও ব্রোকারহাউজের কর্মীরা। কেউ কেউ দিন পার করছেন মানবেতর অবস্থায়। তারা মানবিক বিবেচনায় হলেও ঈদের আগেই বাজারে লেনদেন শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

গত কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজার অনেকটা নিম্নমুখী থাকলেও চলতি বছরের শুরুর দিকে তা তীব্র হয়ে উঠে।

আর মার্চের শুরুতে শুরু হয় বাধাহীন পতন। গত ১৮ই মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে আসে। তবু বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। তাদের আশা ছিল, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপের কারণে হয়তো বাজার করোনার ধাক্কা সামলে উঠবে। কিন্তু এর মধ্যেই সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির থেকে বন্ধ রাখা হয় পুঁজিবাজারের লেনদেনও।

বিনিয়োগকারীরা জানান, লেনদেন বন্ধ থাকার কারণে তাদেরকে দুইটি বড় সমস্যায় পড়তে হয়েছে। যারা ব্রোকারহাউজ অথবা মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ (মার্জিন ঋণ) নিয়ে শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন তাদের ঋণের সুদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। লেনদেন চালু থাকলেও হয়তো অনেকে তাদের শেয়ার কিছুটা বিক্রি করে ঋণের চাপ কমিয়ে নিতে পারতেন। তাতে সুদের বাড়তি বোঝা তাদের ঘাড়ে চেপে বসতো না। অথবা যাদের নতুন তহবিল ম্যানেজ করার ক্ষমতা আছে, তারা তার যোগান দিয়ে ঋণের পরিমাণ কমিয়ে নিতে পারতেন।

অন্যদিকে অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী আছেন যারা তাদের পুরো সঞ্চয়ই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বসে আছেন। লকডাউনের কারণে তাদের অনেকেরই বেতন হয়নি বা যারা ছোট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের ব্যবসা বন্ধ থাকায় কোনো আয়-রোজগার নেই। এমন অবস্থায় জীবন ধারণ করাই তাদের জন্য দুরুহ হয়ে পড়েছে। স্ত্রী সন্তানদের মুখে তিন বেলা খাবরের যোগান দেয়া, অতি জরুরি কোনো পণ্য কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। আবার তাদের পক্ষে দরিদ্র মানুষদের মতো বাইরে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করাও অসম্ভব। লেনদেন চালু থাকলে তারা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগের একাংশ তুলে নিতে পারতেন। কারণ বিনিয়োগে লাভ-লোকসানের হিসাবের চেয়ে বেঁচে থাকাটা জরুরি।

দেশে করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য মহামারি ঠেকাতে গত ২৪শে মার্চ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে যা ২৬শে মার্চ থেকে শুরু হয়। সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আছে। যদিও করোনার মধ্যেও সারা বিশ্বে পুঁজিবাজার চালু আছে, তবু বাংলাদেশে লেনদেন আর শুরু হয়নি। সীমিত সময়ের ব্যাংকিংসহ কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লেনদেন শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র দাবি।

এদিকে সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে ২৬শে মার্চ থেকে বিএসইসি, সিডিবিএল এবং স্টক এক্সচেঞ্জেও ছুটি চলছে। তাই বাজারে লেনদেন হয়নি। তবে গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পরিষদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে ১০ই মে থেকে লেনদেন শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রেক্ষিতে গত ৩রা মে বিএসইসির কাছে সীমিত পরিসরে লেনদেন শুরুর অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি বিএসইসি। এ অবস্থায় ডিএসই সাধারণ ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৬ই মে পর্যন্ত লেনদেনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। তবে ডিএসই এটিও বলেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে লেনদেন শুরুর অনুমতি পাওয়া গেলে তারা ছুটি বাতিল করে লেনদেন শুরু করতে প্রস্তুত।

এমজে/