প্রবৃদ্ধির ম্যাজিক সংখ্যা নিয়ে বিস্ময়

প্রবৃদ্ধির ম্যাজিক সংখ্যা নিয়ে বিস্ময়

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বুঝতে পারছেন না কীভাবে এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। কী ম্যাজিক আছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে। তারা এও বলছেন, তাহলে করোনা কী চলে গেছে। নাকি করোনার কোনো প্রভাব থাকবে না অর্থনীতির ওপর।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, অর্থমন্ত্রী জিডিপির কি লক্ষ্য ধরলেন বুঝতে পারছি না। কোথা থেকে আসবে এই প্রবৃদ্ধি? আমরা অর্থনীতিবিদরা পাঁচ-সাড়ে পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরতে বলেছিলাম। সেখানে ৬ শতাংশ ধরা যেতে পারত। ধরা হল বিদায়ী বাজেটের মতই ৮ দশমিক ২ শতাংশ!’

তিনি বলেন, এই মহামারীর সময় দেশের প্রতিটি মানুষ আতঙ্কিত-ভীত, রপ্তানি আয় আর রেমিটেন্স কমছে, আমদানি তলানিতে নেমে এসেছে। কতদিন এই অবস্থা থাকবে অনিশ্চিত। তারপরও ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কোন যাদুর বলে আসবে?’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এবার অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে তার বাস্তবসম্মত ভিত্তি নেই।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ১ শতাংশ। অথচ এই প্রবৃদ্ধি হলো বাজেটের মূল ভিত্তি। এটাই যদি দুর্বল হয় তখন রাজস্ব আদায়ের টার্গেট অর্জন হবে না।

এতে বাজেটে ঘাটতির মাত্রা বাড়বে। ঘাটতি মেটাতে যদি ব্যাংক ঋণ নেয়া হয় তাহলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ যেটা অনেক দিন ধরে কমে আসছে সেটা আরো কমবে। এতে করে বিনিয়োগ ও কর্মস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে। সবমিলিয়ে এবারের বাজেট বস্তুনিষ্ঠ নয়। সাধারণত কিছুটা উচ্চাভিলাষ ও কিছুটা বস্তুনিষ্ঠতার সামঞ্জস্য রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আমি মনে করি এবারের বাজেটটিতে উচ্চাভিলাষ আছে বস্তুনিষ্ঠতা নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটে করোনার ঝুঁঁকি মোকাবিলায় যে কাঠামো থাকা দরকার সেটা পরিপালন হয়নি বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের মনে হয়েছে এই বাজেটে অনুমিতি বিষয় কাজ করেছে। সেটা বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন করে না। কারণ বাজেটের যেসব প্রস্তাব দেখেছি, সম্পদ আহরণ থেকে সম্পদ ব্যয়ে বিভিন্ন খাতে যেভাবে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে, মনে হয়েছে আমরা খুব দ্রুতই করোনা থেকে মুক্ত হবো এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্বের ও জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হয়নি।