বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা সঠিক হয়নি: সিপিডি

বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা সঠিক হয়নি: সিপিডি

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো এবং কিছু খারাপ দিক রয়েছে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সিপিডি বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি ধরা হয়েছে। কোভিড-১৯ এখনও চলমান। সুতরাং এই অনুমতি সঠিক মনে হয়নি। এক্সপোর্টের (রপ্তানি) প্রবৃদ্ধির টার্গেট করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। এ বছর হয়তো ১৮ শতাংশ নেগেটিভ গ্রোথ হবে। তারপরেও লো লেবেল থেকে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করা চ্যালেঞ্জিং হবে।

ম্যাক্রো ইকোনমিকটা এমনভাবে করা হয়েছে, যেন আমরা খুব দ্রুত রিকভারি করব। কিন্তু আমাদের বেসরকারি-সরকারি ইনভেস্টমেন্টের যে ধরনের প্রবণতা বা ধারাবাহিকতা সবকিছু মিলিয়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ও রফতানির ক্ষেত্রে যে অনুমতি করা হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। শনিবার ‘সিপিডির বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব কথা তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, রাজস্বের ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ শতাংশের মতো গ্রোথ ধরা হয়েছে। সেখানে বড় অংশই আসবে অপ্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে। এ সময় কর ফাঁকি কমিয়ে কিভাবে ইনকাম ট্যাক্স থেকে বর্ধিতটা নিতে পারতাম মানুষের ওপর চাপটা না বাড়িয়ে, সে ধরনের রাজস্ব কাঠামো হলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে সেটা ভালো হতো।
‘বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক থেকে ৮৭ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সরকার এই টাকা নিলে ব্যাংক থেকে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের অর্থ পেতে সমস্যা হবে বলে আমাদের মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, হিসাব মেলানোর জন্য বিদেশি সাহায্যের কথা বলা হয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার। সেটা আমরা সর্বোচ্চ ৮ বিলিয়নের মতো ব্যবহার করতে পেরেছি আগে। সুতরাং ৮ বিলিয়ন থেকে ১১ বিলিয়নে নিয়ে যাওয়া বড় একটা চ্যালেঞ্জ হবে, বিশেষ করে সরকারি প্রজেক্ট বাস্তবায়নের যে ধীর গতি আমরা দেখছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এই অনুমতিগুলো আরও বাস্তবভিত্তিক করলে ভালো হতো।

তিনি আরো বলেন, ব্যক্তির আয়কর মুক্ত সীমা ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। মহিলা এবং সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সেটা বাড়ানো হয়েছে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষ কিছু সুবিধা পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু উচ্চ আয়ের মানুষেরা আরও বেশি সুবিধা পেয়েছেন। প্রথমবার অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করলে ২০০০ টাকা রেয়াত পাওয়া যাবে। এক পেজের একটা ট্যাক্স রিটার্ন করা হয়েছে। সব টিআইএন ধারীদের রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আসা হয়েছে ই-টিআইএন এর আওতায়। এগুলো ভালো উদ্যোগ।’

তিনি আরো বলেন, করপোরেট ট্যাক্সের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ রেয়াত দেয়া হয়েছে, যারা মার্কেটের বাইরে (অতালিকাভুক্ত), এর ফলে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ব্যবধান কমে গেল। গত কয়েক বছর ধরে আমরা ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে চাচ্ছি, সে দিক থেকে এটা ঠিক হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি। অপ্রদর্শিত আয় শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করা যাবে এটা অনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে কাম্য নয়। মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- ধরতে পারলে ৫০ শতাংশ জরিমানা করে সেটা আদায় করা হবে। কিন্তু এর আগে ছিল ধরতে পারলে জেল- জরিমানা হবে। সেখান থেকেও এটা কিন্তু এক ধরনের অব্যাহতি দেয়া হলো।

তিনি বলেন, টার্নওভার ট্যাক্সের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। কোভিডের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, টার্নওভার ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। আমরা দেখেছি, অভ্যন্তরীণ শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার একটা চেষ্টা করা হয়েছে, এটা খুব ভালো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ শিল্পের ক্ষেত্রে সুচিন্তিতভাবে বেশকিছু ইনসেটিভ দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্সের মাধ্যমে। এটা আমাদের কাছে ভালো বলে মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, টোব্যাকোর ওপরে প্রাইস এবং সম্পূরক শুল্ক দুটোই বাড়ানো হয়েছে, এটা আমাদের কাছে ভাল মনে হয়েছে। আগে ফার্নেস অয়েলের ওপর যে সুবিধা দেয়া ছিল, তা তুলে নেয়া হয়েছে, এর ফলে ফার্নেস অয়েল বেজ পাওয়ার প্ল্যান্ট নিরুৎসাহিত হবে। এটা আমাদের কাছে ভাল মনে হয়েছে। সরকারের ফার্স্ট ট্রাক প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে সেইটা ঠিক হয়নি। এটা নীতিনির্ধারকরা চিন্তা করতে পারেন।

মোবাইলের সিমের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো উচিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোবাইলের সিমের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় ইন্টারনেটের ব্যবহার কমবে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা খুব ভালো অবস্থানে আছি। এখানে ইন্টারনেট বড় ভূমিকা রেখেছে। সে দিক থেকে এটা রোহিত করলেই ভালো হবে বলে আমাদের মনে হয়েছে। ব্যাংকের আবগারি শুল্ক নিয়ে আগেও সমালোচনা হয়েছে। এটা না বাড়ালে ভালো হতো। স্বাস্থ্যখাতে যেভাবে অগ্রাধিকার দেয়ার দরকার ছিল সেভাবে দেয়া হয়নি। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখলাম, হেলথ সেক্টর কোভিড রিলেটেড প্রজেক্ট কেবলমাত্র একটা। এগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এডিপিতে ১-২ লাখ টাকার অনেক সিম্বলিক প্রজেক্ট এবারও রাখা হয়েছে। এগুলো ভালো হয়নি। সামাজিক সুরক্ষার অতটা আরও বাড়ানো যায় কি না তা পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। ৫০ লাখ মানুষকে যে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে তার আওতা আমরা আরও বাড়াতে পারি।