বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশের মধ্যে শীর্ষে চীন নবম ভারত

বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশের মধ্যে শীর্ষে চীন নবম ভারত

দেশে গত বছরে বিদেশে বিনিয়োগ এসেছে ২৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আগের বছরের চেয়ে যা ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশের মধ্যে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে চীন। দেশটি গত এক বছরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ৬২ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে)। চীনের এ বিনিয়োগ মোট বিদেশী বিনিয়োগের প্রায় ২২ শতাংশ। শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যা মোট বিনিয়োগের প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। আর নবম স্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, যা মোট বিনিয়োগের ৪ শতাংশের মতো। চীনের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে বিদ্যুৎ ও বস্ত্র খাতে। বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। এবারে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালাও শিথিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গেল বছরে বিদেশী বিনিয়োগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ খাতে উল্লিখিত সময়ে বিনিয়োগ হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। বিদ্যুৎ খাতের মধ্যে গেল বছর চীনেরই বিনিয়োগ হয়েছে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে ব্যাংকিং খাতে ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গেল বছর ব্যাংকিং খাতে বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে ৩৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে খাদ্যে ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গেল বছর খাদ্যে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ২৪ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। চতুর্থ সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে টেক্সটাইল খাতে সাড়ে ৮ শতাংশ। গেল বছর এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ২৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার। টেলিকমিউনিকেশন খাতে আসা বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে পঞ্চম স্থানে। গেল বছর এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশভিত্তিক বিদেশী বিনিযোগকারী শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে চীন ও যুক্তরাজ্যের পরেই রয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটি গেল বছর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে মোট বিদেশী বিনিয়োগের প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। ১৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। দেশটি গত বছর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ১৯ কোটি ৪২ লাখ ডলার, যা মোট বিদেশী বিনিয়োগের ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। দেশটি গেল বছর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ১৯ দশমিক ১৭ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের দিক থেকে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি গেল বছর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ১৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগের দিক থেকে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে হংকং। দেশটি গেল বছর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, যা মোট বিদেশী বিনিয়োগের ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। নবম অবস্থানে রয়েছে ভারত। আর দশম অবস্থানে রয়েছে জাপান ৭ কোটি ২৩ লাখ ডলার, যা মোট বিদেশী বিনিয়োগের ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবার বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। ছাড় দেয়া হয়েছে বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেয়ার নীতিমালায়। মুনাফা যাতে সহজেই দেশে নিতে পারে এজন্য বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। আগে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হতো, এখন মুনাফা দেশে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে না। বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে না। অপর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ছাড়াই বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা নিতে পারবে। বিদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য বড় ধরনের ছাড় দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রানীতিমালা শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে বিদেশী কোম্পানিগুলোর মূলধন প্রস্থানে বড় ধরনের ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় বলা হয়, কোনো বিদেশী বিনিয়োগকারী তার নিট মূলধন দেশে ফিরিয়ে নিতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে না। এমনকি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি না হলেও তারাও মার্চেন্ট ব্যাংক বা কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট দ্বারা হিসেবায়ন করে নিট সম্পদ দেশে ফিরে নিতে পারবেন। স্থায়ী সম্পদের মূল্য অতিমূল্যায়িত করে বেশি অর্থ যেন দেশে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য আগে এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ নীতিমালায় এমনই ছাড় দিয়ে গত জুনে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূলত বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এমজে/