পণ্যের মূল্য সরাসরি নিতে পারবে না ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান

পণ্যের মূল্য সরাসরি নিতে পারবে না ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান

এখন থেকে পণ্য বা সেবার অগ্রিম মূল্য গ্রাহকের কাছ থেকে সরাসরি নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিতে পারবে না কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ঝুঁকি বিবেচনায় যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করে লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সমপ্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, সরকারের জারি করা ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনা’ এড়ানোর উদ্দেশ্যে কিছু সংখ্যক ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে গ্রাহকদের থেকে পণ্য ও সেবামূল্যের অগ্রিম অর্থ সরাসরি গ্রহণ করছে। তাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে ডিজিটাল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কোম্পানি বা কোম্পানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবে পণ্য ও সেবামূল্যের অগ্রিম অর্থ সরাসরি জমা বা গ্রহণ করা যাবে না। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রদত্ত ট্রানজেকশন প্রোফাইলের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করতে হবে। পাশাপাশি লেনদেনের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ ও সামগ্রিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করে লেনদেন পরিচালনা করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশাবলী অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে, ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এক নির্দেশনায় জানায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের পণ্য বা সেবা বুঝিয়ে না দিয়ে বিক্রয়মূল্য পাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি পণ্য ৫ দিন ও অন্যান্য পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ হবে ৭ দিনের মধ্যে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ক্রেতা পণ্য হাতে পাওয়ার পরই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অর্থ পরিশোধ হবে।

দেশের সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস), পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ও পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরগুলো (পিএসও) ডিজিটাল কমার্স লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্য-সেবার বিপরীতে গ্রাহকের পরিশোধ করা অর্থ কীভাবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট) পেমেন্ট করবে তার নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রেতাদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ই-কমার্স ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ক্রম বিকাশমান ডিজিটাল কমার্সের মূল্য পরিশোধে ব্যাংক, পিএসও এবং ই-ওয়ালেট ব্যবহার করা হচ্ছে। সমপ্রতি দেখা যাচ্ছে, গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়েও অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে বা পণ্য পাচ্ছেন না। বিধায় গ্রাহক ও পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে যা ডিজিটাল কমার্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, পণ্য ডেলিভারির আগে টাকা পাবে না ইভ্যালির মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ওই পণ্যের পেমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। এ জন্য পণ্য অর্ডারের বিপরীতে পরিশোধিত টাকা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সরকার অনুমোদিত মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা জমা থাকবে। এ খাতের যথাযথ বিকাশ, পরিশোধের সেবা প্রদানকারীদের ঝুঁকি নিরসন, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ ও ডিজিটাল কমার্সের ওপর জনগণের আস্থা ধরে রাখতে ডিজিটাল কমার্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।