২০৫৭ সাল পর্যন্ত টানতে হবে পদ্মা সেতুর ঋণের বোঝা

২০৫৭ সাল পর্যন্ত টানতে হবে পদ্মা সেতুর ঋণের বোঝা

বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতু। এতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। তবে এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। কারণ নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় পুরোটা সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিচ্ছে অর্থ বিভাগ। এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে এ অর্থ ফেরত দেবে সেতু বিভাগ। ফলে ২০৫৭ সাল পর্যন্ত বিবিএকে টানতে হবে ঋণের বোঝা। আর এ ঋণ শোধের জন্য সেতুটির টোলের হারও ধরা হয়েছে বেশি।

এদিকে পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে ঋণ দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। দুই শতাংশ সুদে ৩০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে বিবিএকে। এ ঋণের বোঝা টানতে হবে ২০৩৭ সাল পর্যন্ত।

সম্প্রতি পদ্মা সেতুর ঋণ, সুদহার, কিস্তির সংখ্যা ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর সেতু ভবনে। এতে জানানো হয়, চুক্তি অনুযায়ী পদ্মা সেতুর ঋণের কিস্তি চলতি অর্থবছর থেকে পরিশোধ শুরু করার কথা ছিল। তবে কভিডের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়া এক বছর বিলম্বিত হয়। তাই পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে অর্থ বিভাগের ঋণ পরিশোধ শুরুর সময়সীমাও এক বছর পেছানো হয়। আগামী জুনে সেতুটি উদ্বোধন করা হবে। আর আগামী (২০২২-২৩) অর্থবছর থেকে সেতুটির ঋণ শোধ শুরু করা হবে। ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

তথ্যমতে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। বাকি ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এ ঋণ পরিশোধে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট চুক্তি সই করে সেতু কর্তৃপক্ষ ও অর্থ বিভাগ।

ঋণচুক্তি অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর থেকে ৩৫ বছরে অর্থ বিভাগের ঋণ পরিশোধ করা হবে। আর সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে প্রায় সর্বনি¤œ ৮২৬ কোটি থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। ত্রৈমাসিক হিসেবে প্রতি বছর চারটি ও ৩৫ বছরে মোট ১৪০টি কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি কিস্তি-পরবর্তী ঋণ স্থিতির ওপর সুদ হিসাব করা হয়েছে। এ ছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষ চাইলে সুদসহ অর্থ অগ্রিমও পরিশোধ করতে পারবে। তবে কোনো কারণে একটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে, তা পরবর্তী কিস্তির সঙ্গে বকেয়াসহ পরিশোধ করতে হবে।

চুক্তিতে আরও বলা হয়, সেতু পারাপারে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী টোল হার নির্ধারণে অর্থ বিভাগ সহায়তা করবে, যাতে সরকারের ঋণ পরিশোধে তারা সক্ষম হয়। নির্ধারিত টোল হার প্রতি ১৫ বছর পর ১০ শতাংশ হারে বাড়বে। এ ছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষ টোল আয়ের ওপর নির্ধারিত হারে ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ করবে।

প্রকল্পের বিস্তারিত ডিজাইন সমীক্ষা প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর টোল হার ফেরির চার্জের দ্বিগুণ প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বর্তমানে মাওয়া ফেরিঘাটে ফেরি পারাপারে বিভিন্ন যানবাহনের যে চার্জ নির্ধারণ করা আছে, সেতুটির টোল হার তার দেড়গুণ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে ২০০৮ সালের ১০ জুলাই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে চুক্তি সই হয়। এর আওতায় ১ কোটি ১১ লাখ ৭৯ হাজার এসডিআর (স্পেশাল ড্রইং রাইটস) বা প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় সংস্থাটি। এ ঋণে সুদের হার ছিল ছয় শতাংশ। ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছিল ৫ বছর।

পরে পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়ন ব্যয় বেড়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ৩ মে এডিবির সঙ্গে আরও ৬২ লাখ ৭৪ হাজার এসডিআর বা প্রায় ৭০ কোটি টাকার পৃথক আরেকটি ঋণ চুক্তি সই হয়। এ ঋণের শর্তও ছিল একই। তবে এসডিআরের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ঋণের কিস্তি ২০২৮ সালের ৩০ জুন ও দ্বিতীয় ঋণের কিস্তি ২০২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরিশোধ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আয়ের ঘাটতি থাকায় অর্থ বিভাগ এ ঋণ পরিশোধ করে দিচ্ছে। আর অর্থ বিভাগকে সেতু কর্তৃপক্ষ ২ শতাংশ সুদে ৩০ বছরে এ ঋণ শোধ করবে। এতে ২০৩৬-৩৭ অর্থবছর পর্যন্ত এ ঋণ অর্থ বিভাগের কাছে পরিশোধ করবে বিবিএ। জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত সেতু কর্তৃপক্ষের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, পদ্মা সেতুতে যে হারে টোল আদায় করা হবে ও যানবাহনের সম্ভাব্য যে পরিমাণ ধরা হয়েছে, তাতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে প্রতি বছর ঘাটতির মুখে পড়তে হবে বিবিএকে। আগামী অর্থবছর থেকে শুরু করে অন্তত ২০ বছর এ ঘাটতি থাকবে। প্রথম দিকে ঘাটতি বেশি থাকবে। সে সময় বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল আয় থেকে এ ঘাটতি পূরণ করতে হবে। পরে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির পর ঘাটতি ধীরে ধীরে কমে আসবে। আর ২০ বছর পর থেকে ঘাটতি পুষিয়ে কিছুটা উদ্বৃত্ত থাকবে।-শেয়ার বিজ