আমদানি দায়ের বোঝা বড় হচ্ছে

আমদানি দায়ের বোঝা বড় হচ্ছে

দেরিতে আমদানি দায় পরিশোধের সময় ৬ মাস বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির দায় পরিশোধে ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিন সময় পাওয়া যাবে। করোনা শুরুর পর থেকে কয়েক দফা সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের এ সময়ে আগের ধারাবাহিকতায় সময় বাড়ানো হলো। বারবার সময় বাড়ানোর ফলে আমদানি দায়ের বোঝা বড় হচ্ছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার সব ব্যাংকে পাঠানো হয়। রপ্তানির জন্য পণ্য আমদানি, শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি উপকরণ ও সার আমদানির জন্য সর্বোচ্চ ১৮০ দিন দেরিতে পরিশোধের শর্তে পণ্য আনা যায়। তবে করোনা শুরুর পর থেকে এসব ক্ষেত্রে ৩৬০ দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। যদিও রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আওতায় আমদানিতে এ সুবিধা মিলবে না।

বিদ্যমান নিয়মে যে কোনো পণ্য আমদানিতে নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে এলসি খুলতে হয়। পণ্য দেশে আসার পর কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ শেষে বিদেশি রপ্তানিকারককে পুরো দায় পরিশোধ করতে হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ঋণের আওতায় পণ্য আনা যায়। এ ধরনের ঋণ সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিট, ডেফার্ড পেমেন্ট হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জুনভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৯৫ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে যা ১১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার ছিল। এর মানে এক বছরেই বেড়েছে ৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার বা ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ। স্বল্পমেয়াদি ঋণের মধ্যে গত জুন শেষে শুধু বায়ার্স ক্রেডিটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ডেফার্ড পেমেন্ট ১ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার। ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দিলেও বর্তমান বাস্তবতায় বিদেশি সরবরাহকারী বাড়াবে কিনা নিশ্চিতভাবে তা বলা যাচ্ছে না। বাড়ালেও সুদসহ দায় পরিশোধে আমদানিকারকের খরচ বাড়বে। এক বছর আগে প্রতি ডলার ৮৫ টাকার কম ধরে আমদানি হতো। এখন গড়ে ১০৬ টাকায় ডলার কিনে পরিশোধ করতে হচ্ছে। অথচ ৮৫ টাকা দর বিবেচনায় পণ্য বাজারজাত করেন তাঁরা। ডলারের দর আরও বাড়লে চাপও বাড়বে। এ ছাড়া একবারে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করতে গিয়ে মুদ্রাবাজারেও চাপ বাড়বে। যদিও চলমান সংকটের মধ্যে সময় না বাড়ালেও অনেক আমদানিকারক খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, তদারকিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন এলসি খোলা কমেছে। রেমিট্যান্স বাড়াতেও হুন্ডি চ্যানেল বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান। এ ছাড়া আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আশা করা হচ্ছে। যে কারণে আবারও সময় বাড়ানো হলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দায় পরিশোধে বড় কোনো সমস্যা হবে না।

জানা গেছে, রেমিট্যান্স কমা ও বিশ্ববাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দরবৃদ্ধির কারণে আমদানি দায় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বেশিরভাগ ব্যাংক। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এখন এলসিও খুলছে না। সরকারি বিভিন্ন আমদানির দায় পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৫৮৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। গতকাল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমেছে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল। আইএমএফের মানদণ্ড বিবেচনায় দেশের রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।