বড়পুকুরিয়ায় কয়লা দুর্নীতি, দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই জড়িত

বড়পুকুরিয়ায় কয়লা দুর্নীতি, দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই জড়িত

ঢাকা, ২৮ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : কয়লা চুরির ঘটনায় দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি কোম্পানির সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীল সব কর্মকর্তাই জড়িত বলে মনে করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। চুরি যাওয়া ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লার বর্তমান বাজারদর ২৩০ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় মনে করে, খনি থেকে উত্তোলন করা কয়লার হিসাব কাগজে থাকলেও বাস্তবে তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন খনির কর্মকর্তারা।

গতকাল শুক্রবার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমদ কায়কাউস সাংবাদিকদের বলেন, কাগজে-কলমে মজুত দেখানো একটা অপরাধ। যদি কয়লা চুরি হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা প্রতিষ্ঠানের লোকজনের মাধ্যমেই ঘটেছে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। চুরি প্রমাণিত হলে এর দায় খনি কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিতে হবে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি তদন্ত করছে।

বিদ্যুৎসচিব ছাড়াও জ্বালানিসচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, রাষ্ট্রীয় সংস্থা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ গতকাল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি পরিদর্শন করেন। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির পাশেই ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এটি দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লার অভাবে গত রবিবার রাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গে লোডশেডিং বেড়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলায় ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এদিকে কয়লা চুরির ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করে পেট্রোবাংলা। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানায় হাবিব উদ্দিনসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে খনি কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত সবাই খনি কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা। কয়লাখনিটি পেট্রোবাংলার অধীন একটি কোম্পানি।

কয়লা চুরির ঘটনায় পেট্রোবাংলার গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে বর্তমান ও অতীতের দায়িত্বশীল সব কর্মকর্তাকে (ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে উপমহাব্যবস্থাপক পর্যন্ত) অভিযুক্ত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বড়পুকুরিয়া খনি কোম্পানিরও চেয়ারম্যান। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কোনো গাফিলতির কথা বলা হয়নি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ গতকাল দিনাজপুরের খনি এলাকায় সাংবাদিকদের বলেন, কয়লায় ঘাপলা করে যাঁরা লোকজনকে কষ্টে ফেলেছেন, তাঁদের বিষয়টি কোনোভাবেই হালকা করে দেখার উপায় নেই।

এদিকে বড়পুকুরিয়া খনি কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির এমডি এ এস এম নূরুল আওরঙ্গজেবকে হজ পালনের জন্য ৪২ দিনের ছুটি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। কয়লা চুরির তদন্তের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়।

কয়লা চুরির ঘটনায় ক্যাবের তদন্ত শুরু
নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বড়পুকুরিয়ার কয়লা চুরির ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের অনিয়ম উদ্ঘাটন’ নিয়ে ক্যাবের একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটি কয়লা চুরির ঘটনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

কয়লা উত্তোলন ও মজুত-সংক্রান্ত তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানতে চাইবে ক্যাবের এই কমিটি। এ ছাড়া পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করবে।

ছয় সদস্যের এই কমিটির সভাপতি লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সদস্য অধ্যাপক এম শামসুল আলম, অধ্যাপক সুশান্ত কুমার দাস, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি খাতের অপরাধীদের চিহ্নিত করতে ক্যাবের একটি কমিটি অনেক দিন ধরেই কাজ করছে। এই কমিটি জ্বালানি খাতের কয়েকটি দুর্নীতি ঘটনায় প্রতিবেদনও তৈরি করেছে। এখন কয়লা চুরির বিষয়ে কমিটি কাজ করছে। সুত্র: প্রথম আলো।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৩০০ঘ.)