এবি ব্যাংকের ১৬৫ কোটি টাকা পাচার

দুদকে সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডির স্বীকারোক্তি

দুদকে সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডির স্বীকারোক্তি

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিদেশে অফশোর কোম্পানি খুলে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা স্বীকার করেছেন এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম ফজলার রহমান।

বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে তারা টাকা পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে বেসরকারি ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডিকে টানা ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। খবর সংশি্লষ্ট সূত্রের।

সূত্র আরো জানায়, ওয়াহিদুল হক ও এম ফজলার রহমানসহ ব্যাংকটির ১২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে দুদক। অর্থ পাচারের অভিযোগের সঙ্গে এসব কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে এ চিঠি দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে দুদকের গণসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তারা ইমিগ্রেশনকে চিঠি দিয়েছেন। ওই তালিকায় ওয়াহিদুল হক ও ফজলার রহমান ছাড়াও ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ চেৌধুরী এবং হেড অব ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউট অ্যান্ড ট্রেজারি আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ পরিচালনা পর্ষদের ৬ জনের নাম রয়েছে।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক এমডি বলেন, একজন আন্তর্জাতিক দালালের খপ্পরে পড়ে তারা সিঙ্গাপুরে অবস্থিত সিঙ্গাপুর ও দুবাইভিত্তিক পিজিএফ (পিনাকল গে্লাবাল ফান্ড) কোম্পানিতে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। এবি ব্যাংকের এ অর্থ দেশের বাইরে স্থানান্তরের আগে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নেননি। এমনকি ওই অর্থ দেশে থেকে স্থানান্তরের আগে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনও নেননি তারা। টাকা দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর পর্ষদের অনুমোদন নেয়া হয়েছে।

সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক বলেন, সিঙ্গাপুরের এক দালাল ২০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করলে ৮০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা বলে তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে যখন ২০ মিলিয়ন ডলার চলে যায় তখন তারা জানতে পারেন, যে কোম্পানিতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন সেটি আসলে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, ভুয়া প্রতিষ্ঠান জেনেও এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা ব্যাংকে গ্রাহকের গচ্ছিত অর্থ দেশের বাইরে পাচার করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদনে্ত বিষয়টি ধরা পড়ে। দুদক ওই প্রতিবেদন পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ওই অভিযোগ সম্পর্কিত নথিপত্র চেয়ে এরই মধ্যে ব্যাংকের বর্তমান এমডির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও দুবাইভিত্তিক কোম্পানি পিজিএফের বিনিয়োগ প্রস্তাব, চুক্তি ও এ সংক্রান্ত পর্ষদ সভার নথিসহ সংশি্লষ্ট দলিল রয়েছে দুদকের কাছে। দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পারে, গত ২ বছরে তিন ধাপে দেশ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, প্রথমে সদ্ধিান্ত ছিল পিজিএফ ৮ কোটি ও এবি ব্যাংক ২ কোটিসহ ১০ কোটি ডলার যেৌথভাবে বিনিয়োগ করে ওই অফশোর কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এজন্য এবি ব্যাংক থেকে পিজিএফের কাছে ২ কোটি ডলার পাঠানো হয়। কিন্তু পরে আর সিঙ্গাপুরে অফশোর কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

এদিকে এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডি ছাড়া আরো সাত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দিয়েছে দুদক। ব্যাংকের আরেকজন সাবেক এমডি শামীম আহমেদ চেৌধুরী এবং ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন অ্যান্ড ট্রেজারি শাখার প্রধান আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ ওই সাত কর্মকর্তাকে ২ জানুয়ারি দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। অন্য কর্মকর্তারা হলেন-ব্যাংকটির হেড অব কর্পোরেট মাহফুজ উল ইসলাম, হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, ওবিইউর কর্মকর্তা মো. আরিফ নেয়াজ, কোম্পানি সচিব মাহদেব সরকার সুমন ও প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা এমএন আজিম। যুগান্তর

(জাস্ট নিউজ/ওটি/১০৪৫ঘ.)