চিত্রনায়ক সালমান শাহ‍’র ২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চিত্রনায়ক সালমান শাহ‍’র ২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। দীর্ঘ ২৩ বছর পার হলেও তার মৃত্যুরে রহস্য আজও তার ভক্তাদের কাছে একটি প্রশ্ন। এই মৃত্যুর কারণ হত্যা নাকি আত্মহত্যা- এ প্রশ্নের উত্তর এখনো খোঁজেন সালমান ভক্তরা।

বাংলা চলচ্চিত্রের এক নক্ষত্রের নাম ছিল সালমান শাহ। যিনি হুট করে এসে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করে মাত্র চার বছরের মাথায় চলে গিয়েছিলেন। অকালপ্রয়াত এই হাটথ্রব নায়কের মৃত্যু নিয়ে এখনো রহস্যই রয়ে গেল। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ ফ্ল্যাটে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তার লাশ। বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করলেও সালমান শাহ ভক্তরা সেটা মেনে নেননি। বিভিন্ন সময় অনেকেই দাবি করেছেন সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

সালমানের ঘনিষ্ঠ অনেকেই দাবি করেছেন স্ত্রী সামিরার পরকিয়া প্রেমের জন্যই প্রাণ দিতে হয়েছে এ চিত্রনায়ককে। পরবর্তী সময়ে সালমানের পরিবার থেকে সামিরা ও আরো কয়েকজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সেটি নিয়ে পরবর্তীতে তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

সালমানের মরদেহের পাশ থেকে যে সিগারেট পাওয়া যায় সেটি সালমান শাহ খেতেন না বলেও দাবি করেন তার মা নীলা চৌধুরী। অন্য ব্র্যান্ডের সিগারেট কে খেয়েছিল সেদিন সালমান শাহের ঘরে? ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন সেদিন ধস্তাধস্তির শব্দ শুনেছেন তারা। সালমান শাহকে দ্রুত হাসপাতালে না নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। এমন অনেকগুলো বিষয়ই এখনো রহস্য ছড়িয়ে রেখেছে ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গনের এই একটি মৃত্যুকে ঘিরে।

কে ছিল সেদিন সালমান শাহর ঘরে? আত্মহত্যা করেননি, তবে কে হত্যা করেছেন সালমান শাহকে? বিভিন্ন সময় গুঞ্জন উঠেছে এক প্রভাশালী চলচ্চিত্র প্রযোজকের সঙ্গে গোপন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা। এদিকে শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহর গোপন প্রেমের কথাও শোনা গিয়েছে। এই চতুর্ভূজ প্রেমের জের ধরেই কি খুন হয়েছিলেন সালমান শাহ? না-কি আত্মহত্যাই করেছেন সবার প্রিয় এ নায়ক।

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী শুরু থেকেই বলে আসছিলেন এটি নিছক আত্মহত্যা নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে আত্মহত্যা বলেই উল্লেখ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ফলে রহস্যই থেকে যায় সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে। তবে বছর তিনেক আগে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী সেই হত্যার রহস্য একটু জোরালোভাবেই প্রকাশ করেছেন। ২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য স্ত্রীর পরকীয়াকেই দায়ী করেছেন।

সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল দাবি করে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর পর দেখা গেছে তার শরীরে কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই। খালি ইঞ্জেকশন পুশ করে এবং গলায় চাপ দিয়ে শ্বাস রোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর এই হত্যার সঙ্গে সালমানের স্ত্রী সামিরা সরাসরি জড়িত।’ তিনি বলেন, ‘সামিরা ও তার পরিবারকে আমার পাশে কোনো সময় দাঁড়াতে দেখিনি। এমনকি সালমান শাহর ঘরে তার স্ত্রীকেও তার কাছে পাইনি। সামিরা এখন সালমান শাহর এক বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করছে। এটা কি প্রমাণ করে না যে সামিরার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল?’ নীলা চৌধুরী বলেন, ‘ওই সময়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সালমান শাহর। অন্য কারো সিনেমা চলতো না। এতে একটা গ্রুপ তার শত্রুতে পরিণত হয়। আর তারাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে’।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তার জন্ম। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। টেলিভিশন নাটক দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হলেও পরে তিনি চলচ্চিত্রে একজন জননন্দিত শিল্পী হয়ে উঠেন। ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সবকয়টিই ছিল ব্যবসা সফল। তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

সালমান শাহ অভিনীত ছবি; কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, বিক্ষোভ, স্নেহ, প্রেমযুদ্ধ, কন্যাদান, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, আঞ্জুমান, মহামিলন, আশা ভালোবাসা, বিচার হবে, এই ঘর এই সংসার, প্রিয়জন, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী, সত্যের মৃত্যু নেই, জীবন সংসার, মায়ের অধিকার, চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়াসী, স্বপ্নের নায়ক, শুধু তুমি, আনন্দ অশ্রু ও বুকের ভেতর আগুন।