হৃদরোগে নয়, ‘পানিতে ডুবে' মারা গেছেন শ্রীদেবী

হৃদরোগে নয়, ‘পানিতে ডুবে' মারা গেছেন শ্রীদেবী

ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : হৃদরোগে নয়, দুবাইতে বলিউডের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শ্রীদেবী ‘দুর্ঘটনাবশত পানিতে ডুবে’ মারা গেছেন বলেই তার ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। দুবাই পুলিশের সূত্রে এ খবর সোমবার বিকালে নিশ্চিত করা হয়েছে।

শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেলের বাথরুমে শনিবার রাতে শ্রীদেবীকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তার স্বামী বনি কাপুর বাথটাবে স্ত্রীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন বলে অভিনেত্রীর পারিবারিক সূত্রে আগে জানানো হয়েছিল।

তবে এই মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমশ নানা রহস্য দানা বাঁধছে। তিনি ঠিক কীভাবে, কোন পরিস্থিতিতে মারা গেছেন তা নিয়ে অনেক প্রশ্নেরই এখনও উত্তর মিলছে না।

ঘটনা হল, মৃত্যুর প্রায় চল্লিশ ঘন্টা পরেও তার মরদেহ ভারতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। এবং তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, আসলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন কি না!

দুবাইয়ের নামী পত্রিকা খালিজ টাইমস ও গালফ নিউজ উভয়েই রিপোর্ট করেছে, শ্রীদেবীর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে পানিতে ডুবে মৃত্যুর কথাই বলা হয়েছে। তবে এই মৃত্যুর পেছনে কোনো ‘ক্রিমিনাল মোটিভ’ বা অপরাধমূলক উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও খালিজ টাইমস দাবি করেছে।

দুবাইতে ভারতীয় দূতাবাসের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে তারা আরো জানাচ্ছে, শহরের জুমেইরা এমিরেটস টাওয়ার হোটেলে স্থানীয় সময় রাত ১১টা নাগাদ শ্রীদেবীর মৃত্যু হয়।

তবে শ্রীদেবীর পারিবারিক সূত্রে ঘটনার যে বিবরণ পাওয়া গিয়েছে, তার সঙ্গে ওই মৃত্যুর সময়ে কিছুটা অসঙ্গতি আছে। তারা জানিয়েছেন, শ্রীদেবীর স্বামী বনি কাপুর দুবাইতে পরিবারের এক আত্মীয়র বিয়ে সেরে ভারতে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু স্ত্রী শ্রীদেবীকে ‘সারপ্রাইজ ডিনার’ দিতে তিনি শনিবার বিকালে আবার মুম্বাই থেকে দুবাইতে উড়ে যান।

স্বামীর সঙ্গে নৈশভোজে যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার আগে শ্রীদেবী নাকি স্নান করতে বাথরুমে ঢোকেন। কিন্তু মিনিট ১৫ পার হয়ে গেলেও তার কোনো সাড়াশব্দ না-পেয়ে স্বামী বনি কাপুর দরজা ঠেলে বাথরুমে ঢুকে দেখেন - বাথটাবে শ্রীদেবী পড়ে আছেন, তার শরীরে কোনো নাড়াচাড়া নেই।

তিনি তাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, তারপর খবর দেন এক বন্ধুকে। পরে রাত ৯টা নাগাদ পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। শ্রীদেবীকে স্থানীয় রাশিদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তৃপক্ষ জানায় তাকে ‘মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে’।

দুবাইয়ের নিয়ম অনুসারে হাসপাতালের বাইরে যে কোনো মৃত্যু হলেই সেখানে ময়নাতদন্ত বা ফরেনসিক অনুসন্ধান বাধ্যতামূলক। সেই প্রক্রিয়ায় অন্তত ২৪ ঘন্টা সময় লাগে বলেই শ্রীদেবীর পরিবার চাওয়া সত্ত্বেও তার মরদেহ রবিবার ভারতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু সোমবার বেলা গড়ানোর পরও যখন শ্রীদেবীর ফরেনসিক রিপোর্ট ও ডেথ সার্টিফিকেট পেতে দেরি হতে থাকে, তখন থেকেই তার মৃত্যু নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়।

এর আগে সোমবার সকালেই ভারতের প্রথম সারির পত্রিকা দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া রিপোর্ট করেছিল, শ্রীদেবীর মৃত্যু হৃদরোগেই হয়েছে কি না - এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে সোমবার মুম্বাইতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রীদেবীর অন্ত্যেষ্টির সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল - লোখান্ডওয়ালাতে তার বাড়ির সামনেও অগণিত ভক্ত-অনুগামী শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয়েছিলেন। ফরেনসিক রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় সেই সব আয়োজনই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায়।

শ্রীদেবীর মরদহে আনতে ভারতের শিল্পপতি ও পারিবারিক বন্ধু অনিল আম্বানি তার প্রাইভেট জেট দুবাইতে পাঠিয়েছিলেন, সেই জেটও বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে থাকে।

অবশেষে সোমবার বিকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জারি করা সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানানো হয়, দুর্ঘটনাবশত পানিতে ডুবেই ভারতীয় নাগরিক ‘শ্রীদেবী বনি কাপুর আইয়াপ্পানে’র মৃত্যু হয়েছে।

তবে এই রিপোর্ট বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীদেবীর মৃত্যু নিয়ে সব জল্পনার অবসান হল তা মোটেও বলা যাবে না - কারণ কীভাবে তিনি জলে ডুবে গেলেন সে প্রশ্নের উত্তর অজানাই রয়ে গেল। -বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৮৪৩ঘ.)