রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির ঘুরে এসে প্রিয়াঙ্কার আকুল আবেদন

‘শিশু ও নারীদের রক্ষায় এগিয়ে আসুন’

‘শিশু ও নারীদের রক্ষায় এগিয়ে আসুন’

কক্সবাজার, ২৪ মে (জাস্ট নিউজ) : কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সব ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী ও ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে তার চার দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।

বিশ্বের সকলকে রোহিঙ্গা শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, এসব শিশুকে নিজেদের সন্তানের মতো দেখুন। বলিউড এই অভিনেত্রী বলেন, ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা শিশুরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। কারণ তাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। বিশ্বকে এসব শিশুদের দায়িত্ব নিতে হবে।

বলিউড ছাড়িয়ে হলিউডে পদচারণা এবং দ্যুতি ছড়ানো ভারতীয় অভিনেত্রী প্রিয়াংকার কাছে প্রশ্ন ছিল পুঞ্জিভূত রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি তিনি কোনো আহ্বান জানাবেন কি-না? ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সংকট সমাধানের বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে মিয়ানমারের প্রতি চাপ বাড়াতে দিল্লির রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি তার কোনো আহ্বান আছে কি-না? জবাবে চোপড়া বিনয়ের সঙ্গে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক লোক নই। আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম...। বাক্য সম্পূর্ণ না করে তিনি যা বুঝানোর চেষ্টা করেন তা হলো- তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে সমাধানে চাপ বা তৎপরতা চালাতেন।

পরবর্তীতে তাকে ‘শিশুদের প্রধানমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়ে এক প্রশ্নকর্তা জানতে চান- সারা দুনিয়াতে তিনি ইউনিসেফ’র শুভেচ্ছাদূত হিসেবে শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, আশ্রয়হীনদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার কণ্ঠ। রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তাদের ছেড়ে আসা বসতিতে শান্তি ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে ভারত সরকারের প্রতি আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের কোনো আহ্বান জানাবেন কি-না? এবারো তিনি প্রধানমন্ত্রী বা রাজনীতিবিদ নন বলে, তা হলে তিনি এ প্রশ্নের জবাব দিতেন এবং ভূমিকা রাখতেন বলে জানান। এ সময় তিনি প্রশ্ন কর্তার স্মার্টনেসের প্রশংসাও করেন।

গত চারদিনে তিনি উখিয়া ও টেকনাফের ১০টি শরণার্থী ক্যাম্প এবং সীমান্তের কাছের রোহিঙ্গা আগমনের ট্রানজিট পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন তাদের বাস্তবতা, তাদের সংকট। ৫-৬ বছরের শিশুদের চিত্রকর্ম দেখার কথা জানিয়ে প্রিয়াংকা বলেন, তারা দেখেছে মাথার উপরে রকেট লঞ্চার, পায়ের তলায় মাইন। তারা সেটা মনে রেখেছে এবং এঁকেছে। সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়েছে, তাদের প্রতি মানবিকতার জন্য। “যে মানবিকতা সারা বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।” সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি সীমা সেন গুপ্ত, ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর কমিউনিকেশনস চিফ জ্যঁ জ্যাক সিমনও বক্তব্য দেন।

এদিকে ইউনিসেফ প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুভেচ্ছা দূতের বাংলাদেশ সফরের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়- সফরকালে তিনি কক্সবাজারের শামলাপুর, লেদা, উনচিপ্রাং, জামতলি, বালুখালি ও কুতুপালংসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও অস্থায়ী আশ্র কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি তার সফরকে মূল্যায়ন করেন এভাবে- আমি এখানে উপস্থিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করার মাধ্যমে সংকটের প্রকৃত ব্যাপকতা উপলব্ধি করেছি। শুনেছি নৃশংস হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার হৃদয়বিদারক কাহিনী, যা পরিবারগুলোকে বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে। দেখেছি অসহনীয় পরিস্থিতি, যেখানে লাখ লাখ শিশু এখন বসবাস করছে।

রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তা ও সুরক্ষায় ইউনিসেফ ও তার অংশীদাররা তাদের পক্ষে যা করা সম্ভব তার সবকিছুই করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বাবা-মায়েদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের একটি হচ্ছে সন্তানদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনা। শিক্ষা ও শেখার সুযোগ না পেলে রোহিঙ্গা শিশুরা অতি দ্রুত হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজন্মে পরিণত হবে।

শিক্ষা কোনো পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করতে পারে না। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে গত সোমবার বাংলাদেশে আসেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তিনি ঢাকায় অবতরণের পরই কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যান। সফরের সমাপনী দিনে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছে।

শুভেচ্ছাদূতের সফর নিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার বলেন, এমন জরুরি পরিস্থিতির কথা যাতে মানুষের মনে থাকে এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে যাতে তারা উৎসাহিত হয় তা নিশ্চিত করতে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো শুভেচ্ছা দূতদের সমর্থন অমূল্য। রোহিঙ্গা শিশুদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩২৮ঘ.)