সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি নিহত

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি নিহত

সৌদি আরবের জেদ্দায় মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন প্রবাসী বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতির আউলাতৈল গ্রামের ফোরকান আলীর ছেলে আল-আমিন, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও এর কামাল উদ্দিন এর ছেলে শাকিল মিয়া (তার পাসপোর্ট নাম্বার বিসি-০১৮৩০৩০) এবং নরসিংদী জেলার মনোহরদীর উত্তর কাচিকাটা গ্রামের কামাল মিয়ার ছেলে কাওছার মিয়া।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় জেদ্দার হাইয়াল সামির এলাকায় তাদের বহনকারী গাড়িটিকে অপর একটি বড় লরী ধাক্কা দিলে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান গাড়িতে থাকা তিনজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সৌদি রেড ক্রিসেন্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিভিল ডিফেন্সের জরুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

নিহত তিনজনই সৌদি ইয়ামামা কোম্পানিতে পরিছন্নতা কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের মরদেহ জেদ্দা বাদশাহ আব্দুল আজিজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন কনস্যুলেটের আইন সহকারী হাসিব হোসেন।

নিহত শাকিল মিয়ার চাচাতো ভাই রাসেল জানান, মঙ্গলবার রাত একটার সময় তারা কাজে গিয়ে বুধবার দুপুর বারোটার সময় কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার মুহূর্তে এই দুর্ঘটনা ঘটে। শাকিল পরিবারের বড় ছেলে। দুই ভাই এক বোন শাকিল সবার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন শাকিল।

রাসেল মিয়া আরো জানান, শাকিল কিছু দিন আগে ছুটি শেষ করে সৌদি আরবে এসেছে। আসার পূর্বে ব্যাংক থেকে ঋণ করে বসতঘর তৈরি করেছিল। এরই মাঝে চিরমুক্তি নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন শাকিল।

নিহত কাওছারের মামা আজহার জানান, পিতৃহীন কাওছার বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান। গত তিন বছর পূর্বে তার বাবাও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল। কাওছার ছিল পরিবারের একমাত্র সম্বল। এখন তার বিধবা মাকে দেখাশোনা করার আর কেউ রইলো না। নিহত মায়ের বাংলাদেশ সরকারের কাছে একমাত্র দাবী ছেলের লাশটি যেন দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

নিহত আল-আমিনের স্ত্রী বিলকিস বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাদের বিয়ের পাঁচ বছর হলেও তাদের কোন সন্তান নেই। আল আমিন তাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল। নিহত আল আমিন ছিল পরিবারের সবার বড়। তার একটি ছোট বোন রয়েছে। স্বামীকে হারিয়ে বিলকিস বেগমের পরিবারের চলছে শোকের মাতম।

বিলকিস বেগম আরো বলেন, আমার স্বামীকে আর পাব না কিন্তু আমার মৃত স্বামীর লাশটি যেন দেখতে পারি। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমার স্বামীর লাশটি আমাদের কাছে পাঠান। শেষবারের মতো যেন তাকে দেখতে পারি।

জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে যতদ্রুত সম্ভব নিহতদের মরদেহ দেশে পাঠানো হবে।