মৌলভীবাজারে লন্ডন ফেরত নারীর মৃত্যু, ৫ বাসা লকডাউন

মৌলভীবাজারে লন্ডন ফেরত নারীর মৃত্যু, ৫ বাসা লকডাউন

মৌলভীবাজারে লন্ডন ফেরত একজন নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। করোনা সন্দেহে সিভিল সার্জন ও পুলিশ প্রশাসনের তরফে ওই নারীর বাসাসহ আশেপাশের পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। বলাবলি আছে, ওই পাঁচ বাড়ির একটি বাড়িতে একজন ইতালি ফেরত যুবকও রয়েছেন!

গত রবিবার দুপুরে ওই নারীর মৃত্যু হয় এবং অবিশ্বাস্য দ্রুততায় তার ওই দিনই তার দাফন সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রশাসন পুলিশ পাঠিয়ে এলাকাটি সিল করে গতকাল সোমবার। সঙ্গে যায় স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন। তাদের অ্যাকশনে দিনভর ওই মৃত্যু নিয়ে শহরময় আলোচনা চলে। নানা গুজব-গুঞ্জবও ছড়ায়। কৌতুহলী লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর, প্রশাসন ও পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, মৌলভীবাজার শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাশীনাথ সড়কের এম আর ভিলার বাসিন্দা রেজিয়া বেগম আগে থেকেই অসুস্থতা ছিলেন। হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি বৃটেন থেকে ফিরেন। দেশে আসার পর তার সর্দি-জ্বর হয়। রোববার দুপুরে আচমকা তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তৎক্ষণাৎ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণার পরপরই পরিবারের লোকজন তার মৃতদেহ নিয়ে যান। দুপুর দুইটায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের ভাদগাঁওস্থ স্বামীর বাড়িতে তার জানাজা হয়। তিনটার পরে সদর উপজেলার মোকামবাজার এলাকায় তাঁর স্বামীর প্রতিষ্ঠিত একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।

গতকাল সোমবার দুপুর দুটার দিকে ওই নারীর শহরের বাসায় সিভিল সার্জনসহ পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত হলে ঘটনার ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়। করোনা সন্দেহ ওই বাসাসহ আশাপাশের পাঁচটি বাসা সিল করে দেয়া হয়। এবং বাসিন্দাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে দেয়ালে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়।

মৌলভীবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাশ জানান, ওই নারীর মৃত্যুর কারণ এখনও অস্পষ্ট। তবে প্রশাসন কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা তাদের আনুষ্ঠানিক ভাষ্য শোনার অপেক্ষায় আছি। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক পার্থ সারথি দত্ত কানুনগো জানিয়েছেন- রবিবার দুপুর একটার দিকে রাজিয়া বেগমকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণার পর সঙ্গে থাকা স্বজনরা বিলম্ব না করে লাশ নিয়ে চলে যান। ফলে রোগীর কোনো হিস্ট্রি রাখা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, কাশিনাথ রোডের একটি বাসায় জ্বরাক্রান্ত ইতালি ফেরত একটি ছেলে আছে। এজন্য সতর্কতামূলক পাঁচটি বাসা কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন তওহীদ আহমদ বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকজনের সন্দেহজনক আচরণের কারণে তারা সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। করোনা কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি এখনও পরিস্কার নয়।

এদিকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ইতালি, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা ৪৮৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন অফিস।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির জানান, হোম কোয়ারেন্টিনে যাদের রাখা হয়েছে তাদের সিংহভাগই বিদেশ ফেরত। এর মধ্যে কুলাউড়ায় ৭৬ জন, বড়লেখায় ৫৪ জন, কমলগঞ্জে ৯১ জন, সদরে ৪৫ জন, জুড়ীতে ৫৩ জন, রাজনগরে ৬১ জন এবং শ্রীঙ্গলে ১০৬ জন। তাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। যেহেতু তারা করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন তাই বাড়তি সর্তকতার জন্য তাদের নিজ বাসা-বাড়িতে ১৪ দিন সেলফ কোয়ারেন্টিনে মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে।