নিউইয়র্কে করোনায় বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের মৃত্যু

নিউইয়র্কে করোনায় বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের মৃত্যু

নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক প্রবাসী পরিবারের দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। ৪ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে এস্টোরিয়ার বাসিন্দা ইকবাল হক ভূঁইয়া প্রিন্সের নিউজার্সি রাজ্যের আটলান্টিক শহরের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয়। এর এক সপ্তাহ আগে প্রিন্সের বড় ভাই শিপন আহমদেরও নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়।

এই দুই ভাইয়ের বাড়ি ঢাকার গোপীবাগে। এ নিয়ে আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬৪ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হলো। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন অনেক বাংলাদেশি। আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক শতাধিক।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া তাহের আহামদ পাটোয়ারী

এদিকে নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাহের আহামদ পাটোয়ারী নামের আরেকজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। ৩ এপ্রিল স্থানীয় সময় পাঁচটায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মরহুমের শ্যালক ব্যবসায়ী আজম সোহাগ এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। মরহুম তাহেরের সহধর্মিণী করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কের আরেকটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

করোনাভাইরাস নিউইয়র্ক রাজ্যকে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য নিউজার্সির অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। মিশিগান রাজ্যের অবস্থাও ভালো নয়। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। দেশটির নিউইয়র্ক রাজ্যে হাসপাতালে রোগী ধারণ করার জায়গা নেই। তাই অস্থায়ীভাবে ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কের পর কুইন্সের ইউএস ওপেন ভেন্যুতেও করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল খোলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সামনের দিনে আরও অনেক মানুষের মৃত্যু হবে। নিউইয়র্কের জন্য জরুরি ভিত্তিতে এক হাজার সামরিক চিকিৎসাকর্মী পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

নিউইয়র্কের রাজ্য গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ৪ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, গত একদিনে সেখানে করোনায় আক্রান্ত ৬৩০ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে শুধু নিউইয়র্কেই মৃতের সংখ্যা এখন ৩ হাজার ৫৬৫ জন।

শুধু মৃত্যু নয় আক্রান্তের দিক দিয়েও নিউইয়র্কের অবস্থান সবার ওপরে। কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৪ জন। এর মধ্যে শুধু নিউইয়র্ক নগরীতেই আক্রান্ত ৬৩ হাজার ৩০৬; মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬২৪ জনের।

করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিদিন ব্রিফিং করছেন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গভর্নর ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আগামী ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো স্থানের চেয়ে নিউইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ হতে পারে। যদিও নিউইয়র্ক শহরে কিছুটা উন্নতি হয়েছে তবে রাজ্যের লং আইল্যান্ড কাউন্টিতে দিন দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া তাহের আহামদ পাটোয়ারী

৩ এপ্রিল নিউইয়র্ক রাজ্যের হাসপাতাল থেকে ১ হাজার ৫৯২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার হার আগের দিনের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। কুমো জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের পুরো দুই-তৃতীয়াংশ বাড়িতে ফিরেছেন সুস্থ হয়ে। যদিও নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশি একজন চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন, করোনাভাইরাসে ভালো হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরলেও যেন সবাই নিজেকে অন্তত এক সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন রাখেন। হাসপাতালে স্থান সংকুলান সামাল দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়ার আগেই অনেককে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে নিউইয়র্কে হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জামের সংকটে পড়া নগরীতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চীন। চীন থেকে জন কেনেডি এয়ারপোর্টে এক হাজার ভেন্টিলেটর এসে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছেন রাজ্য গভর্নর।

আমেরিকায় করোনায় মৃতের সংখ্যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। শেষ খবর অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮ হাজার ৪৯৯ জন মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ এপ্রিল বলেছেন , সামনের সপ্তাহে আরও খারাপ সময় আসছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি অনেক মানুষ মারা যাবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েই দেশের এ বিষয়ে শীর্ষ চিকিৎসক ডেবোরাহ ব্রিকস বলেছেন, পরের দুই সপ্তাহ হবে ভয়াবহ। তিনি বলেন, এখন গ্রোসারি বাজার বা ফার্মেসিতে কেনাকাটায় যাওয়ার সময় নয়। জীবন রক্ষা করার জন্য নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখতেই হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সদস্য অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা কাজ করছে এবং তিনি বিশ্বাস করেন পরিস্থিতির উন্নতি হবে। একই সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, কোনো কোনো সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দেশকে আবার তিনি সহসাই উন্মুক্ত করে দিতে চান।

নিউইয়র্কের বাংলাদেশি চিকিৎসক মোহাম্মদ আলম নগরীর তিনটি নার্সিং হোমে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নামের ওষুধ দিয়ে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় সফল হয়েছেন। তাঁর এ সাফল্য নিয়ে নিউইয়র্ক পোস্ট ৪ এপ্রিল একটি প্রতিবেদনে বলেছে ৮১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধটি কাজ করছে।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কুইন্স, ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিনের হাসপাতালে ঠাঁই নেই অবস্থা। একাধিক বাংলাদেশি চিকিৎসক বলেছেন অসুস্থতা নিয়ে ঘরে বসার অবকাশ নেই। অবস্থা খারাপ হলে ৯১১ কল করা, পরামর্শের জন্য যেকোনো বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্স আসলে, ম্যানহাটনের হাসপাতালের মধ্যে কলম্বিয়া হাসপাতাল বা অন্য কোনো বড় হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই চিকিৎসকেরা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলছেন। এ রোগে মৃত্যুর হার এখনো চার পাঁচ শতাংশের নিচে। আমেরিকায় এখন এর চিকিৎসার জন্য কোনো স্বাস্থ্যবিমার দরকার হচ্ছে না। বাংলাদেশিদের মধ্যে কেউ মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে bengalimentalhealth.org বা অন্য এ রকম কোনো সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

নিউইয়র্ক নগরীর শিক্ষা বিভাগ থেকে তৈরি খাবার দেওয়া হচ্ছে। যে কেউ স্কুল থেকে এসব খাবার সংগ্রহ করতে পারবেন। ঘরে খাবার সংকট থাকলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।