ঢাকায় জরুরি চিঠি

করোনা ‘মুক্ত’ দক্ষিণ কোরিয়া, ডাকছে বাংলাদেশিদের

করোনা ‘মুক্ত’ দক্ষিণ কোরিয়া, ডাকছে বাংলাদেশিদের

মধ্যপ্রাচ্যেসহ গোটা দুনিয়ার শ্রমবাজার থেকে যখন একের পর এক দুঃসংবাদ আসছে, ঠিক সেই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি সুসংবাদ এসেছে। রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ঢাকায় জরুরি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, করোনার ভয়ে ঢাকায় ফিরে আসা বাংলাদেশিদের ডাকছে আপাতত সংক্রমণ মুক্ত বা নিয়ন্ত্রণে থাকা কোরিয়া।

সিউল চাইছে বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীরা দ্রুত ফিরে যাক এবং তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব বুঝে নিক।

কোরিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের সুনাম রয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মিজ ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ২০ শে ফ্রেবুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। কয়েক দিনের ব্যবধানে পরিস্থিতি বেশ খারাপ অবস্থায় পৌঁছে যায়। ওই সময়ে প্রায় ৩ শতাধিক বাংলাদেশি কর্মী ভয়ে ঢাকা ফিরেন। কিন্তু খুব অল্প সময়ে করোনাকে বাগে আনতে সক্ষম হয় প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইন-এর সরকার। যারা পুরস্কার তারা পেয়েছে ১৫ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক নির্বাচনে।

করোনায় দুনিয়া যখন স্তব্দ, কোরিয়ায় তখন বেশ ঘটা করে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনে দেশটির জনগণ প্রেসিডেন্ট মুন জা ইনের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে জাতীয় পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৮০টি উপহার দিয়েছে। আগের নির্বাচনে ৬০টি আসন কম ছিল তাদের। বিশ্লেষকরা মুনের এ জয়কে স্ট্রেইট করোনা নিয়ন্ত্রণের ট্রফি বা পুরস্কার বলছেন। কারণ ১৯৮৭ সালে কোরিয়ার বর্তমান গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি কোন দলের সবচেয়ে বড় জয়।

উল্লেখ্য, কোরিয়ার এবারের নির্বাচনের বিশেষ দিক ছিল তরুণ ভোটারদের প্রথম বারের মত ভোটাধিকার প্রদান। ২০১৯ এর শেষের দিকে দেশটির জাতীয় পরিষদে সংস্কার বিল পাস হয়, যাতে ভোটাধিকার প্রদানের নূন্যতম বয়স ১৯ থেকে কমিয়ো ১৮ বছর করা হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী ভোট প্রদানে এবার সূযোগ পেয়েছে, যা মুন জা ইনের ভোট বাড়িয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে কোরীয় মডেল, প্রশংসিত গোটা দুনিয়ায় অত্যন্ত অল্প সময়ে কোরিয়ায় নিয়ন্ত্রণে আসে বৈশ্বিক মহামারি করোনা বা কোভিড-১৯। বলা যায় স্বতন্ত্র এক পদ্ধতি প্রয়োগ করে সিউল এটি নিয়ন্ত্রণে আনে, যাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থন ছিল।

স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে, রেপিড অ্যান্ড এক্সটেনসিভ টেস্টই কোরিয়াকে দ্রুত সফলতা এনে দিয়েছে। কোরিয়া পশ্চিমা দুনিয়ার লকডাউন মডেল ফলো করেনি। বরং নিজস্ব মডেলেই তারা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া রোধে সক্ষম হয়।

এক হিসাবে দেখা গেছে, পাঁচ কোটি জনসংখ্যার দেশ কোরিয়ায় ২০ শে ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে অর্থাৎ প্রতি এক মিলিয়নে পাঁচ হাজার ২০০ জনকে ল্যাবরেটরি টেস্টের আওতায় আনা হয়। তা ছাড়া কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনের নিয়ম ভঙ্গকারীদের জন্য দুই হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানার কঠোর ঘোষণাও কার্যকর ফল দেয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি যে কোরীয়াতে করোনা শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ছিল ৯৯৯, আজ সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা নেমে এসেছে ১৪ জনে। করোনা নিয়ন্ত্রণে কোরিয় মডেল আজ গোটা দুনিয়ায় প্রশংসিত হচ্ছে। সিউল আজ তার মডেল রপ্তানী করছে বন্ধু দেশগুলোতে। সঙ্গে তাদের রেপিড কিটও।

সর্বেশেষ যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কিট নিয়েছে কোরিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের এই দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য চিঠি পাঠিয়ে সিউলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও। শুধু তা-ই নয়, কোরিয়ার কাছে আজ করোনা নিয়ন্ত্রণের দাওয়াই চাইছে বিশ্ব। সিউলের একটি পরীক্ষার ফল এবং বাংলাদেশিদের অবস্থান এদিকে সিউলে অল্প কদিন আগে ২০২০ সালের ২য় পর্বের পয়েন্ট বেইজ সিস্টেমে E-7-4 ভিসা প্রাপ্তদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বমোট ভিসা পেয়েছেন ২৩১ জন। নির্বাচিত মার্ক ছিল ৫৭ এই পর্বে ভিসা পেয়েছেন ৪৭ জন বাংলাদেশী।

ইপিএস বাংলা কমিউনিটি ইন কোরিয়ার পক্ষ থেকে ভিসা প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে। বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীরা ফিরছেন ১ লা মে। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, বোয়েসেল সব কিছু দেখছে। তারা বিমানের সঙ্গে কথাও বলেছে। তবে বিমানের ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স পাওয়া নিয়ে একটু জটিলতা এখনও আছে। তবে এটুকু মোটামুটি নিশ্চিত যে ১লা মে তারা সিউলে ফিরছেন।