রায়হান কবিরকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

রায়হান কবিরকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সরকারের নীতির সমালোচনার করার প্রতিশোধ হিসাবেই বাংলাদেশি শ্রমিক রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের ওপর সরকারের নিপীড়ন নিয়ে আলজাজিরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মী রায়হান কবির। তার জের ধরে ২৪ জুলাই তাকে গ্রেফতারের পর ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।

দেশটির অভিবাসন পুলিশের মহাপরিচালক ঘোষণা করেছে, রায়হান কবিরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং আজীবনের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হবে, যেন তিনি আর মালয়েশিয়ায় ঢুকতে না পারেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে বলছেন, ‘রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের নেয়া পদক্ষেপ সব অভিবাসী শ্রমিকদের অবাধ গ্রেফতার, বহিষ্কার, কালো তালিকাভুক্তির মতো অধিকার হরণের মতো ঘটনায় কথা বলার বিরুদ্ধে একটি শীতল বার্তা দিচ্ছে।’

‘তথ্যচিত্রের একজন বক্তব্যদাতাকে গ্রেফতার করা মানে হলো মালয়েশিয়ার বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের বিধ্বংসী হামলা,’ বলছেন তিনি।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের আচরণ নিয়ে ৩ জুলাই প্রচারিত আলজাজিরার একটি তথ্যচিত্রে রায়হান কবির বক্তব্য দেন।

এরপর রায়হান কবির এবং আলজাজিরা- উভয় মালয়েশিয়ার সরকারের টার্গেটে পরিণত হয় বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবৃতি উল্লেখ করেছে।

আলজাজিরার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, মানহানি, এবং যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া আইন লঙ্ঘন সম্পর্কিত অভিযোগ আনা হচ্ছে।

গ্রেফতারের প্রথম দিনে সাংবাদিকদের কাছে লেখা একটি চিঠিতে রায়হান কবির বলেছেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমি মিথ্যা বলিনি। আমি শুধুমাত্র অভিবাসীদের ওপর বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছি। আমি চাই অভিবাসী ও আমার দেশের সম্মান নিশ্চিত হোক। আমার বিশ্বাস, সব অভিবাসী এবং বাংলাদেশি আমার পাশে থাকবে।’

বাংলাদেশের ২১টি সিভিল সোসাইটি গ্রুপ রায়হান কবিরকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, রায়হান কবিরের ব্যাপারে যেভাবে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে, তার প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে।

আলজাজিরার তথ্যচিত্রটি প্রচার হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে। সেখানে তার ছবি, নাম, ঠিকানার ব্যবহার করা হয়, যা তাকে অভিবাসীদের জন্য প্রতিকূল হয়ে ওঠা দেশটিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গ্রেফতারের কয়েকদিন পরেই মালয়েশিয়ার অভিবাসন পুলিশের মহাপরিচালক গণমাধ্যমে ঘোষণা করেন, রায়হান কবিরের কাজের অনুমতি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রায়হান কবিরকে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি বা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বিদেশিদের নিয়ে অহেতুক ভয়ের এই সময়ে রায়হান কবিরের ওপর মালয়েশিয়ার সরকারের এ রকম প্রকাশ্য হামলায় বিরোধী শক্তিকে রসদ জোগাবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকারে দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকদেরও সুরক্ষা দেয়া হয়েছে এবং তাদের বাকস্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে, বলছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সংস্থাটি বলছে, রায়হান কবিরের গ্রেফতার এবং আলজাজিরার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে দেশটির বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বড় ধরণের দমন পীড়নের একটি অংশ, যেখানে সরকারের সমালোচনার করার কারণে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাধারণ নাগরিকরাও তদন্ত ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

‘অভিবাসীদের ওপর আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলা কোনো অপরাধ নয়, এরকম নির্যাতন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করাও অন্যায় নয়,’ বলছেন রবার্টসন।

‘মালয়েশিয়ার সরকারের উচিত রায়হান কবিরকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করার চেষ্টা করা,’ বলেন তিনি। সূত্র : বিবিসি

এমজে/