হাউস অব লর্ডসে সেমিনার

সরকারি খরচে লন্ডন গেলেও সেমিনারে গরহাজির আওয়ামী লীগ

সরকারি খরচে লন্ডন গেলেও সেমিনারে গরহাজির আওয়ামী লীগ

লন্ডন থেকে বিশেষ সংবাদদাতা, ২০ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : বৃটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সেমিনার কক্ষে মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার বিষয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিএনপি প্যানেল অংশ নিলেও সরকারিদল আওয়ামী লীগের প্যানেলটি অংশগ্রহন হতে বিরত থাকে। ফলে একতরফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে অংশ নিতে সরকারি খরচে লন্ডন গেলেও সেমিনার অনুষ্ঠানে গরহাজির ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

সেমিনারের আয়োজক  হাউস অব লর্ডসের সদস্য আলেক্সান্ডার চার্লস কারলাইল এপ্রসঙ্গে একটি লিখিত বিবৃতি বলেন, এই আচরণ বৃটিশ পার্লামেন্টকে অপমান ও অসম্মান করার সামিল।এহেন পিছুটান একটি কাপুরুষিচিত কান্ড। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এই সেমিনারে অংশগ্রহণ না করে আমাদেরকে হতাশ করেছে।

ফরেইন এন্ড কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশে সকল দলের অংশ গ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য।

বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে লজ্জিত। তাদের মুখ দেখানোর মতো কোনো অবস্থা নেই। কারণ তারা ৫ জানুয়ারি সংবিধানের অজুহাত দেখিয়ে একটি জগণ্য নির্বাচন করার পর বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওয়াদা করেছিল যে স্বল্পসময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু তারা ক্ষমতার লোভে আজ পর্যন্ত সেই ওয়াদা রক্ষা করেনি।ফলে গণতন্ত্রকামী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের অপকর্মের মাত্রা এতো বেশি যে ডিফেন্ড করার মতো কিছু নেই। সেমিনারে জামাতের অংশগ্রহন প্রসঙ্গে সাবেক এই বানিজ্য মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ঢাকা থেকে সব জেনেই লন্ডনে এসেছে। এখন একটা অজুহাতে সেমিনার বর্জন করেছে।

এদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, আমাদেরকে জানানো হয়েছিল যে বৃটিশ পার্লামেন্টের উদ্যোগে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। পরে আমরা জানতে পারি যে এই সংলাপ একজনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে আমরা এতে অংশগ্রহণ সমীচীন মনে করে নি। এছাড়া বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস অব কনজারভেটিব পার্টির উদ্যোগে দুপুরে ভূড়ি ভোজের আয়োজন ছিল সেখানে অংশ গ্রহণ করেছি। বুধবার আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাতে বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড কমার্সের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করবো।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভি ও ডা. দিপু মনি। দিপু মনি বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি জামায়াত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। ওই দলের সদস্যদের সাথে আমরা বসতে পারি না। কিন্তু এই সংলাপে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে আমরা এই সংলাপে অংশ গ্রহণ করিনি।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে হাউস অব লর্ডসের এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করে আসছিলো বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের প্রতিনিধি। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের আলোচ্য বিষয়ে ছিল ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ’।

আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করলেও যথা সময়ে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্ত্বে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক, দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক রুমিন ফারহানা সেমিনারে যোগ দেন।

অন্যান্যের মধ্যে আরো যারা যোগ দেন- ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতি নির্ধারক কর্মকর্তা  মি. ডোরিন পালাঘিসিইউসি, যুক্তরাজ্যের ফরেইন এন্ড কমনওয়েলথ বিষয়ক প্রধান নিক মেলার, মানবাধিকার কর্মী মীনাক্ষী গাঙ্গুলিসহ হাউস অব কমন্সের একাধিক সদস্য।

(জাস্ট নিউজ/প্রতিনিধি/জিইউএস/০০৪৪ঘ)