যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে শ্লীলতাহানি: আওয়ামী লীগ নেতার ২ বছরের কারাদণ্ড

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে শ্লীলতাহানি: আওয়ামী লীগ নেতার ২ বছরের কারাদণ্ড

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে বোস্টন শাখার আওয়ামী লীগ নেতা আসিফ আহমেদ চৌধুরী ওরফে আসিফ বাবু (৬২)কে দুই বছরের কারাদন্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকালে সালেম সিটি’র সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক টমাস ড্রেসলার এ রায় ঘোষণা করেন। চারটি অভিযোগের মধ্যে ২টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ২ বছরের কারাদণ্ডসহ 'যৌন অপরাধী বা লম্পটের' তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তিরও আদেশ দেওয়া হয়। উভয় পক্ষের আইনজীবীসহ প্রচুর সংখ্যক বোস্টন প্রবাসী বাংলাদেশি রায় ঘোষণার সময় আদলতে উপস্থিত ছিলেন। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

আসিফ আহমেদ চৌধুরী ওরফে আসিফ বাবু'র (মামলা নম্বর ২০৭৭সিআর০০৩১০) বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে গালাগালি সহযোগে দৈহিক আক্রমণ ও শ্লীলতাহানিসহ চারটি অভিযোগ আনা হয়েছিলো। এরমধ্যে ২টি অভিযোগ- ২৬৫/১৩এইচ-৩ এ/বি ধারায় ১৪ বছর বা তার বেশি ব্যক্তির উপর অশালীন আক্রমণের অপরাধে, ২৬৫/১৩এ/বি-১ এ/বি সি২৬৫/১৩এ (এ) (অপকর্মের জন্য ১০০ দিনের বেশি কারাবাস) প্রমাণিত হয়েছে। বাকি ২টি অভিযোগ ২৬৫/২২/এ-১ 'ধর্ষণ' এবং ২৬৫/১৫ ডি/এ-শূন্য 'শ্বাসরোধ' প্রমাণিত না হওয়ার উক্ত ২ অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের চরিত্রহীন ব্যক্তি কিভাবে বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ড (বেইন)-এর সভাপতি হিসেবে কমিউনিটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এ বিষয়টিও উঠে আসে দুই আইনজীবীর যুক্তিতর্কে। রায় ঘোষণার সময় আদালত কক্ষে তিন সারি বোস্টন প্রবাসী বাংলাদেশি (সকলেই চট্টগ্রামবাসী) উপস্থিত ছিলেন। দন্ডপ্রাপ্ত আসিফ বাবুর দেশের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়তলীর থানার কাটতলী গ্রামে।

গত ১৪ই অক্টোবর বিচারক টমাস ড্রেচসলার তার বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে গালাগালি সহযোগে দৈহিক আক্রমণ ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগের জামিন প্রত্যাহার করে মুলতবি দণ্ডাদেশে আসিফ আহমেদ চৌধুরী ওরফে আসিফ বাবু (৬২)-কে জেল হাজতে পাঠান।

আসিফ বাবু বোস্টন সংলগ্ন মেডফোর্ডের বাসিন্দা। বোস্টনে দু’গ্রুপে বিভক্ত নিউ ইংল্যান্ড (বোস্টন) আওয়ামী লীগ (ইউসুফ-ইকবাল) গ্রুপের বর্তমান সহ-সভাপতি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে পূর্বে তার কোন সম্পর্ক না থাকলে নিউ ইংল্যান্ড (বোস্টন) আওয়ামী লীগে তাকে অন্তর্ভুক্তি করেন (ইউসুফ-ইকবাল) গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ। তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ড (বেইন)-এর সাবেক সভাপতি, নিউইংল্যান্ড (বোস্টন) স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং নারী সংগঠন নন্দিনী'র নিউ ইংল্যান্ড শাখার সাবেক সভাপতি। ইতিপূর্বেও তার বিরুদ্ধে অনেক শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছিল।

মামলার বিবরণে জানা যায়, আসিফ বাবুকে সালেম সিটি’র একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর উপর গালাগালি সহযোগে দৈহিক আক্রমণ ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তিনি দুই বছর আগে ভাড়ার জন্য একটি রুম সম্পর্কে তার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। সালেম সুপিরিয়র কোর্টের জুরি দ্বারা আসিফ আহমেদ চৌধুরী ওরফে আসিফ বাবু ধর্ষণসহ আরও গুরুতর অভিযোগের পাশাপাশি শ্বাসরোধের অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিলেন। এক সপ্তাহব্যাপী বিচারের পর শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিচারক টমাস ড্রেচসলার চৌধুরীর জামিন প্রত্যাহার করে এবং মুলতবি দণ্ডাদেশে তাকে হেফাজতে রাখার আদেশ দেন।

কৃষ্ণাঙ্গ ঐ নারী সালেমের ফেডারেল স্ট্রিটে জরুরী আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করছিলেন। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন মহামারীর কারণে চাকরি হারানোর পরে ভাড়া দিতে অক্ষম হয়েছিলেন।

তার তৎকালীন ৯ বছর বয়সী মেয়ের সাথে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাকালীন সময় তিনি মেডফোর্ডে থাকার জন্য একটি বাসার অনুসন্ধান করেছিলেন যাতে তার মেয়ে উচ্ছেদের আগে যে স্কুলে পড়াশোনা করেছিল সেখানে ফিরে যেতে পারেন। প্রসিকিউটর কেট ম্যাকডুগালের জিজ্ঞাসাবাদে এ সাক্ষ্য দিয়েছেন ঐ নারী।

তিনি বিচারকদের বলেন, একটি একক রুমে থাকার জন্য তার সামর্থ্য ছিল। তিনি আসিফ বাবুর ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে বাসা ভাড়ার একটি বিজ্ঞাপনে দেখে সাড়া দেন এবং রুমটি নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

কিছু দিন পরে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে আসিফ বাবু সালেমের ওই মহিলার সাথে দেখা করার পরিকল্পনা করেছিলেন যাতে তিনি একটি ভাড়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারেন। ওই বৈঠকের সময় উক্ত নারীর উপর অশ্লীল আক্রমণ ও হামলার ঘটনাটি ঘটে বলে সাক্ষ্য দেন তিনি।